উজানের পাহাড়ি ঢলে ও গত কিছুদিনের টানা বৃষ্টিতে গোমতী ও সালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া ডুবতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা গেছে, গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বুড়িচং উপজেলা প্লাবিত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন শশীদল দিয়ে বয়ে যাওয়া সালদা নদীর বেড়িবাঁধও ভেঙে প্লাবিত হয় ব্রাহ্মণপাড়া। দুই নদীর ভাঙনে এই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৭০ হাজার পরিবার। এদিকে বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও।
পানিবন্দি পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে ৮টি উদ্ধার দলসহ স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যাপ্ত নৌকা সংকটের কারণে ঢাকা থেকে ড্রাম এনে ভেলা তৈরি করে উদ্ধার কাজ চলমান রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদেরসহ বন্যাদুর্গতদের দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ২০ বছরেও এমন পানি দেখা যায়নি এ উপজেলায়। এবার গোমতী ও সালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকে উপজেলার প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের ও রাস্তাঘাট। ঘরে বাইরে পানি আর পানি। যার ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই জীবন বাঁচতে ঘরে জিনিসপত্র রেখে ঘর তালাবদ্ধ করে আশ্রয় নিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছেন অনেক পরিবার। তবে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবীরা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে দিনরাত কাজ করছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও স ম আজহারুল ইসলাম কালবেলাকে নিশ্চিত করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে ওই রাতেই বুড়িচং উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে পুরো বুড়িচং উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। পরে গোমতীর বাঁধভাঙা পানি ঢুকতে শুরু করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। একইসঙ্গে উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সালদা নদীর বাঁধ ভেঙেও এ উপজেলায় পানি ঢুকতে শুরু করে। দুই নদীর বাঁধভাঙা পানিতে অল্প সময়েই ব্রাহ্মণপাড়ার প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। পুরো উপজেলায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিবন্দিদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন, সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রায় আট হাজার পরিবারকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাদুর্গতদের খাদ্য ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন