ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের ভুয়া তালিকা তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে। এমনকি ওই তালিকায় প্রকৃত আহতদের বাদ দিয়ে নিজের ছেলের নাম উল্লেখ করাসহ স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিভিল সার্জনকে তার নিজ কার্যালয়ে কক্ষ ঘেরাও করে অবরুদ্ধ রেখে জেরা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সিভিল সার্জনসহ তিন কর্মকর্তার বিচারের দাবির জন্য দুপুর ২টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। এর মধ্যেই সিভিল সার্জন কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান।
অভিযুক্ত অন্য দুই কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন- স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বজলুর রশিদ ও সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী সরদার মো. জালাল। জালাল বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টাকা তুলে থাকেন বলে অভিযোগ থাকায় এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কয়েকদিন আগে তাকে সদরপুরে বদলি করা হয়েছে।
এদিন দুপুর ১১টায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে সরাসরি সিভিল সার্জনের কক্ষে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ফেলে লাঞ্ছিতও করা হয় ডা. সিদ্দিকুর রহমানকে।
এসময় শিক্ষার্থীরা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। একজন শিক্ষার্থী সিভিল সার্জনকে টুপি খুলে কথা বলতে বলেন।
জেলা জজকোর্টের অ্যাডভোকেট মঞ্জুয়ারা স্বপ্না সিভিল সার্জনের কক্ষেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সিভিল সার্জনকে বলেন, আপনার পৃষ্ঠপোষকতায় জালাল, বজলুরসহ এই অফিসের অনেকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আপনাকে আর আমরা চাই না। আপনি এখানে দীর্ঘ পাঁচ বছর আছেন, কেন পাঁচ বছর আছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে জাদু বা মধু আছে। আপনি সেই মধু আহরণ করেছেন জালালকে (প্রধান সহকারী) দিয়ে। এই জালালের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আপনি এবং মধুও খাচ্ছেন আপনি। আপনি যে লেবাসে আছেন রেসপেক্ট করার মতো কিন্তু আমরা তদন্ত করে যেটা পেয়েছি তাতে আর রেসপেক্ট করা যায় না এবং এখানে রাখাও যায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবরার নাদিম ইতু ফরিদপুর সদর হাসপাতালসহ জেলার স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি অব্যবস্থাপনার বিষয় তুলে ধরেন। এ ছাড়া আন্দোলনে আহতদের তালিকা দেখিয়ে আবরার নাদিম ইতু সিভিল সার্জনের উদ্দেশ্যে বলেন, ফরিদপুরে আন্দোলনে আমিও আহত হয়েছি, আমার নাম কোথায়। প্রকৃত যারা আহত হয়েছে তাদের নাম কোথায়। আপনার ছেলে ফরিদপুরে কোথায় আন্দোলন করেছে। কাদের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকা করেছেন।
শিক্ষার্থীরা পরে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন। এরপরই গুঞ্জন ওঠে দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে গেছেন সিভিল সার্জন।
তবে সিভিল সার্জনের পদত্যাগের বিষয়টি অস্বীকার করে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. বদরুদ্দোজা টিটো কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সরকারি কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে হলে অনেক নিয়ম রয়েছে। তিনি (সিভিল সার্জন) দুপুরেই ছুটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে চলে গেছেন। সেখানে ট্রেনিং আছে এবং ট্রেনিং শেষে লং টাইমের (দীর্ঘ সময়) ছুটিতে যাবেন বলে জানিয়ে গেছেন।
মন্তব্য করুন