ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে বাসস্থান, কৃষিজমি, মাছের ঘের, গবাদিপশু। দিশেহারা অবস্থায় বাড়িঘর ফেলে প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ। ভিটে হারানো কেউ হয়েছে বানভাসি, কারো ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা নিকটস্থ রেলস্টেশনে।
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত অসহায়দের মধ্যে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ভিটেহারা বিধবা সুলতানা একজন। তার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তিন মেয়েকে নিয়ে আবাস গড়েছেন রসুলপুর রেলস্টেশনে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একমাত্র আশ্রয়স্থল মাটির ঘরটি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী রেলস্টেশনে। ভেবেছিলেন বন্যার পানি কমলে আবার ফিরবেন সুলতানার শেষ সম্বল স্বামীর ভিটায়।
কিন্তু বিধি বাম, পানি কমে গেছে, যাওয়ার সময় সুলতানার মাটির ঘরটিও নিয়ে গেছে। ফলে পিতৃহারা তিন মেয়েসহ দীর্ঘায়িত হলো রসুলপুর রেলস্টেশনে সুলতানার গন্তব্যহীন যাত্রা।
জানা গেছে, সুলতানার স্বামী আমজাদ হোসেন স্ট্রোক করে দুই বছর আগে মারা গেছেন। বড় মেয়ে রেজওয়ানা তাবাস্সুম তুসমি ২০২২ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০২৪ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করেন। সুলতানার মেঝ মেয়ে মারিয়া আফরিন তুহি নবম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে মাজরিয়া আক্তার নিহা স্থানীয় একটা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
সুলতানা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মানুষের কাছে থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে মেয়েদের পড়ালেখা ও সংসার চালাতে হচ্ছে। এখন বন্যার পনিতে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। স্বামীর স্মৃতি সম্বল বলতে একটা মাত্র মাটির ঘর ছিল। সেখানেই তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতাম। সর্বনাশী বন্যায় কেড়ে নেয় আমার স্বামীর শেষ চিহ্নটুকুও। এখন কীভাবে ঘর ঠিক করব? কীভাবে মেয়েদের পড়া লেখা করাব জানি না।
তিনি বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেয়েদেরকে নিয়ে রেলস্টেশনে ছিলাম। এখন পানি কমে গেছে তাও স্টেশনে থাকতে হচ্ছে। আজ ৩৫ দিন ধরে চুলায় আগুন জ্বলে না। প্রতিবেশীদের দেওয়া চিড়ামুড়ি, বিস্কুট, রুটি খেয়েই অধিকাংশ দিন কেটেছে।
সুলতানার বড় মেয়ে তুসমি বলেন, যাযাবরের মতো জীবন যাপন করছি। আজকে এখানে তো কালকে আরেক জায়গায়। সামনে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, জানি না লেখা পড়াটা চালিয়ে যেত পারব কিনা।
মন্তব্য করুন