বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ছবি : কালবেলা
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুর অলুয়া চন্ডিপুর রেজাউল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিসহ নানা অভিযোগে এনে প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোকজন আন্দোলন করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে জোর প্রয়োগ করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের ল্যাব অপারেটর ফখরুল ইসলাম ও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।

এ ছাড়া বাহির থেকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সুফিয়ানকে লাঞ্ছিত করেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারী ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা, সেনাবাহিনীর একটি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

বিদ্যালয়ের বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিদ্যালয় চলাকালে কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত কিছু লোকজন আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করে বিদ্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে হামলা চালায়। এ সময় আমাদের ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম স্যারকে মারধর করে এবং তারা জোর করে ঘণ্টা বাজিয়ে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেন। এ সময় বিদ্যালয় থেকে আমরা যেতে না চাইলে আন্দোলনকারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসলে আমাদের বিএসসি শিক্ষক আবু সুফিয়ান স্যারকে হামলাকারীরা লাঞ্ছিত করে এবং আমাদেরসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলে।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করে স্থানীয় কিছু লোকজন বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা দপ্তরির কাছ থেকে জোর করে বেল কেড়ে নিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা। আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণিকক্ষে দরজা বন্ধ করে আশ্রয় নিই। এতেও আমাদের শেষ রক্ষা হয়নি। তারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে মারধর করে। আমাদের ল্যাব সহকারী ফখরুল ইসলাম ও দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্র ও ছাত্রী তাদের মারধরের শিকার হয়।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম নোমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদ তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগমের নিয়োগটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া তিনি তার মনগড়া মতো বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনসহ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেওয়া অভিযোগের আশানুরূপ কোনো সমাধান পাইনি। আমরা মনোহরপুর অলুয়া চন্ডিপুর রেজাউল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রপাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে এই বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফারহানা পৃথা বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় আন্দোলনকারীদেরকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে স্থানীয় কিছু লোকজন ১০টি অভিযোগ এনে পূর্বে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করে তারমধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয় এবং প্রমাণিত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসকের নিকট আবারও অভিযোগ দাখিল করেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, তারা জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দেওয়ার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারেন না। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রশাসন কখনোই সমর্থন করে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১০

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১১

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১২

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৩

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

১৪

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

১৫

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

১৬

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে যা বললেন তামিম

১৭

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১৮

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১৯

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

২০
X