আফজাল হোসেন, বারহাট্টা (নেত্রকোনা)
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ভাত তারা দিতে চায়, আমি খাই না’

নিজ হাতে মাছ রাখার ছোড়কা বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাচ্ছেন বেগম মিয়া। ছবি : কালবেলা
নিজ হাতে মাছ রাখার ছোড়কা বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাচ্ছেন বেগম মিয়া। ছবি : কালবেলা

বৃদ্ধ বয়সে প্রতিটি মানুষের শেষ সম্বল নিজের সন্তান-সন্ততি। শেষ বয়সে এসে প্রতিটি মানুষ নিজ সন্তানের কাঁধে ভর করে চলার আশায় তাদের মানুষ করে। কিন্তু ৮৫ বছরের প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ বেগম মিয়ার ৮ সন্তান থাকতেও করতে হচ্ছে বেতের কাজ ও ভিক্ষা। আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেদের বিরুদ্ধে তিনি বলেন ‘তারা আমাকে ভাত দিতে চায়, আমি খাই না’।

প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে চারটি মাছ রাখার ছোড়কা বিক্রি ও ভিক্ষা করে সংসার চালান ৮৫ বছর বয়সী এই বেগম মিয়া। বেগম মিয়া নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মিয়াখুব আলীর ছেলে। তিন ছেলে, পাঁচ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নাতিপুতিতে ভরপুর তার সংসার। এর পরও বৃদ্ধ বয়সে বেগম মিয়া ও তার স্ত্রীকে পরিশ্রম ও ভিক্ষা করে খেতে হয়।

বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁশ কেটে এনে বেত তুলে খুব সূক্ষ্মভাবে তৈরি করেন মাছ রাখার ছোড়কা। মাছ শিকারিরা এটি মাছ রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এটি ভাটি অঞ্চলে ছোড়কা বা ছোকরা হিসেবে পরিচিত। প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারটি ছোড়কা বানাতে পারেন বেগম মিয়া। এগুলো বানিয়ে নিজ বাড়ি থেকে হেঁটে ৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে বারহাট্টা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান বেগম মিয়া। বাজারে গিয়ে প্রতিটি ছোড়কা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর ভাঙা পা নিয়ে লাঠিতে ভর করে করে আবার ৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে। এভাবেই চলছে এই বৃদ্ধের জীবন। এ বয়সে এসেও চোখে দেখতে কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান এই বৃদ্ধ।

বৃদ্ধ আবেগাপ্লুত হয়ে নিজের ছেলেদের ব্যাপারে বলেন, ‘আমার সেলিম, হেলিম, হালিম নামে তিন ছেলে। আর পাঁচটি মেয়ে আছে। একেক জন চার-পাঁচজনের বাপ হয়েছে। আমি ছোট ছেলের সঙ্গে থাকি। অন্যরা আমাকে ভাত দেয় না। তারা বলে, আমার নিজের বাড়ি থেকে দূরে অবস্থিত তাদের বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসতে। আমার পেটে যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমার বউয়েরা বলে, এখনো ভাত হয়নি, আর একটু পরে আসেন। আমি তাদের ভাতের আশা আর করি না। আমি মরলে আপনারা আমাকে মাটি দেবেন, তাইলেই হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে জায়গায় থাকি ইচ্ছা করলে ছেলেরা বউদের না জানিয়ে আমাকে কিছু খরচাপাতি দিতে পারে। কিন্তু দেওয়ার নিয়ত না থাকলে কেমনে দিবে। আপনাকে কী বলব বাবা, এরা আমাকে ঈদের মধ্যে একটা লুঙ্গিও দেয় না’।

প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- আছে, তবে এখন বেশ কিছুদিন ধরে টাকা পাচ্ছি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১০

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১১

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১২

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৩

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৪

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৫

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৬

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৭

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৮

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

১৯

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

২০
X