চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৮ এএম
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

চিলমারীতে নদীতে ৫০০ হেক্টর জমি, নিঃস্ব ৩০০ পরিবার

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নদীভাঙনের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নদীভাঙনের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের চিলমারী ইউনিয়নে ৬৬ দশমিক ৫৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি চর। যেখানে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। ৩০-৩৫ বছর ধরে স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছিল চরটি। বর্তমানে চরটি ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে পড়ে প্রতিনিয়ত ভিটেমাটি হারাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙলেও সর্বশেষ চলতি বছরের চার মাসের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে সাড়ে তিনশ পরিবার। ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙনের মুখে পড়ে চলতি মাসের জুন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এই সময়টিতে জমিতে আমন ধানের ক্ষেত ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

ভিটেমাটি হারা পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও করতে হয়েছে ধার-দেনা। এখনো শতাধিক পরিবার অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে কয়েকটি আবাসন কেন্দ্রে। ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) চিলমারী ইউনিয়নে সরেজমিন স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের চার মাসে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩৫০ পরিবার। এ বছর ভাঙন শুরু হয়েছিল জুন মাসে। সেই সময়ে সবেমাত্র নদীভাঙন শুরু হয়েছিল। এতে ভিটে হারিয়েছিল ৮০ পরিবার। এরপর টানা নদীভাঙন চলতে থাকে। কখনো ভাঙন বাড়ে, আবার কখনো কমে। পরের মাস ভাঙন তীব্র আকারে রূপ নিলে জুলাই মাসেই গৃহহীন হয় ২০০ পরিবার। তবে আগস্ট মাসে ভাঙন থেমে গিয়েছিল। কিন্তু আবারও সেপ্টেম্বরে ব্রহ্মপুত্র ভাঙন শুরু করে। এতে সেসময় ৫০টি পরিবার নদীতে বিলীন হয়েছিল। তবে সবশেষ চলতি মাসের এই কয়েক দিনের ব্যবধানে ২০ পরিবার ভাঙনের স্বীকার হয়েছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

চিলমারী ইউনিয়নের প্রায় সবাই কৃষি কাজের ওপর নির্ভর করে পরিবারের ব্যয় বহন করে থাকেন। বিশেষ করে এই চর এলাকাগুলোয় ধান, বাদাম, ডালসহ মসলা জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ফসল। এসব বিক্রি করেই মূলত চরের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে, বর্তমানে নদীভাঙনে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে আবাদি জমির আয়তন।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভাঙন আরও বেশি হলে কড়াইবরিশাল এলাকার শাহআলম, সাইদুল, কালাম মিয়া, সমর আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষককে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

চরটিতে আবাসন রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে ফ্রেন্ডশিপ প্লিনিংয়ে ১০০ পরিবার, এর মধ্যে আশপাশে রয়েছে ৩০-৪০ পরিবার। শাখাহাতী আরডিআরএস গ্রামে রয়েছে ১৫০ পরিবার। মনতোলা ও কড়াইবরিশাল আবাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১০০ পরিবার। এসব গৃহহীন বিছিন্নভাবে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়নি শতাধিক পরিবার। এদিকে হুমকির মুখে পড়েছে সাবমেরিন কেবল ও বিদ্যুৎ সংযোগ। এরইমধ্যে ভাঙনের স্বীকার হয়েছে শাখাহাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙনের কারণে এখনো তারা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারেনি। অনেকেই এখনো টাকা-পয়সা ধার-দেনা করে বসতবাড়ি ঠিক করছেন। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে তারা অনুরোধ করেছেন। এদিকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহায়তা পাননি।

সদ্য ভাঙনের শিকার দুলু মিয়া, হারুন মিয়া, মোতাহারসহ অনেকে বলেন, নদী আমাদের বসতবাড়ি কেড়ে নিল, কেড়ে নিল আমাদের সাজানো সংসার। তারা আরও বলেন, নদী আমাদের লাখ লাখ টাকার সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে। আর প্রশাসন ১০ কেজি করে চাল নিয়ে আইসে। হামরা ত্রাণ চাই না, চাই নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে। চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, যে হারে নদী ভাঙছে, এর প্রতিরোধ না হলে চিলমারী ইউনিয়নের পুরো এলাকাসহ সরকারি স্কুল, আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং কড়াইবরিশাল বাজার নদীতে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকশ ঘরবাড়ির বসতভিটা শত শত একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নঈম উদ্দিন কালবেলাকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু চরাঞ্চল হওয়ায় ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। আপাতত বরাদ্দ নেই। তবুও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলের আবারও হামলা

সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র   

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

১০

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১১

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১২

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১৩

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১৪

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৬

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৭

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৮

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৯

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

২০
X