ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মাকে মারধর করে বিল্ডিং থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দিয়েছে সন্তানরা। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বৃদ্ধা মায়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ঘরে রেখেই তালা মেরে দেয় বড় ছেলে মো. মফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোমতাজ বেগম। পরে বাড়ির পরিত্যাক্ত ভাঙা ও জরার্জীণ একটি ঘরের কোণে গত দেড় মাস ধরে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে। সোমবার সন্ধ্যায় দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানার নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হানুল ইসলাম, সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন ও দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক এসআই মো. রেজওয়ানুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ওই বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা করান।
স্থানীয়রা জানায়, অভিযুক্ত বড় ছেলে মো. মফিজুল ইসলাম সিলেটে সেটেলম্যান্ট অফিসে ৪র্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী পদে চাকরি করতেন। এ পদে থেকে সে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। পরে তাকে দুদুকের একটি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, মফিজুল ইসলাম গত দেড় মাস আগে তার মাকে বাড়ির বিল্ডিং থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে দেয়। পরে তার মা পরিত্যাক্ত একটি ভাঙা ঘরে আশ্রয় নেয়। তার গ্রামে ৬ রুমের একটি একতলা বাড়ি ছাড়াও দেবিদ্বার উপজেলা সদরে পাঁচতলা একটি বাড়ি, জাফরগঞ্জে একটি বাড়ি, কালিকাপুরে চারতলা দোকান ও বাড়ি। এত কিছু থাকার পরও নিজের মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
বৃদ্ধ মা দেলোয়ারা বলেন, ‘আমার স্বামী গত ১০ বছর আগে মারা যায়। আমার তিন ছেলে ও চার মেয়ে আছে। ছেলেদের মধ্যে মফিজুল ইসলাম বড়। মেজো ছেলে ইব্রাহিম সৌদি আরব থাকে। আর ছোট ছেলে লোকমান বর্তমানে বেকার। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি এ বাড়িতে থাকি। মেজো ছেলে ও বড় ছেলে মিলে বাড়িতে ৬ রুমের একতলা বাড়ি বানায়। আমি এতদিন এ ঘরেই থাকতাম। গত দেড় মাস আগে মফিজুল ও তার বউ মিলে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়। আমি পরে পরিত্যাক্ত এ ভাঙা ঘরে আশ্রয় নেই। এ ঘরে বিদ্যুৎ নেই, মশারি নেই, ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে ভিজে সব একাকার। সারা রাত বসে থাকি আর চোখের পানি ফেলি।’
বৃদ্ধার আরেক সন্তান ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘আমি প্রবাসে থেকে আমার বড় ভাইকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছি। সে ওই টাকা দিয়ে ৬ রুমের এ বাড়ি বানায়। আমি যখন বিদেশ চলে গেলে তারা আমার স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যান্টমেন্ট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. খোরশেদ মিয়া বলেন, ‘আমি বহুবার চেষ্টা করেছি মীমাংসা করার জন্য। মফিজুল ইসলামের সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছি, সে বলেছে, তার মাকে সে ঘরে নিবে কিন্তু তার ছোট ভাই লোকমানকে ঘরে জায়গা দিবে না। এরপরও বিষয়টি যেহেতু জানাজানি হয়ে গেছে, আমরা চেষ্টা করছি এলাকার লোকজন নিয়ে সমাধান করার জন্য।‘ এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার মাকে ঘরে নেব সমস্যা নেই। কিন্তু আমার ছোট ভাই একটা বাজে মেয়েকে বিয়ে করেছে, যার কারণে আমি ঘরে তুলতে দেয়নি। এখন সে আমার মাকে ম্যানেজ করে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে এসব করাচ্ছে।’
আরও পড়ুন : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক দোকানে, ব্যবসায়ী নিহত দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমি বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করি। ছেলেরা মায়ের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করব।’
মন্তব্য করুন