গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্তরিক ও কার্যকরী ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
গত শনিবার সকালে ময়মনসিংহ নগরীর একটি সম্মেলনকেন্দ্রে পূজা পরিষদের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় তারা বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও হেনস্থার ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে পুরো সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মাঠে না থাকায় দেখা দেয় চরম নিরাপত্তাহীনতা৷ তেমন একটি সময়ে সেনাবাহিনী আস্থার প্রতীক হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো জটিলতার বিষয়ে সেনাবাহিনীকে অবগত করা মাত্রই তারা দ্রুততম সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী পাশে না থাকলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আরও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হতো হিন্দুদের।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই সভায় অংশ নেন ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং উপজেলা ও পৌর এলাকার ২৫৬ জন প্রতিনিধি। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, সহসভাপতি অশোক মাধব রায় ও গোপাল চন্দ্র দেবনাথের সামনে সেনাবাহিনীর আন্তরিক ভূমিকার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেদের নানা হয়রানি ও দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন প্রতিনিধিরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে এসব বিষয় সুরাহারও দাবি জানান তারা।
ময়মনসিংহ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে ও পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধনের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি রতন সরকার বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে আক্রমণের শিকার হয়েছে। থানায় কোনো মামলা নেওয়া হয়নি। জিডি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, প্রত্যেকে যে যেখানে আছেন মামলা রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। প্রথমে থানায় যান, মামলা না নিলে আদালতে যান, আমাদের জানান। হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সব ক্ষতিপূরণ আদায় করা না গেলেও এসবের প্রতিকার হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের যেসব নিরপরাধ ব্যক্তি বিভিন্ন জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের তালিকা পেয়েছেন জানিয়ে নেতারা আরও বলেন, তারা যেন হয়রানি থেকে মুক্তি পান, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে কোনো সরকারের আমলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভালো ছিল না বলে মন্তব্য করে পূজা পরিষদের নেতারা আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর আমাদের কোনো দাবিদাওয়া পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগ বলেছিল, তারা আমাদের পাঁচ দফা মেনে নেবে। কিন্তু তারা তা মেনে নেয়নি। কিন্তু আমরা এমন একটি সম্প্রদায়, যারা উচ্ছৃঙ্খলায় বিশ্বাস করি না।
সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তা পূরণ না হওয়ায় আগস্টে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি এই গণঅভ্যুত্থানে হিন্দু সম্প্রদায়কে এত বেশি মূল্য দিতে হবে। এ অভ্যুত্থানে তো আমরাও অংশ নিয়েছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে তো অনেক হিন্দু ছাত্রও ছিল। যারা পরবর্তীকালে যখন দেখল স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে, তারাই কিন্তু শাহবাগে চরম সত্যগুলো তুলে ধরেছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এ মাটি আমাদের, এ মাটি আমরা ছাড়ব না। আজকে আপনাদের এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই, এই অন্ধকার থাকবে না।
মন্তব্য করুন