সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে ব্যর্থ দাবি করে তার প্রত্যাহার চাইলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া পাঁচ দফা দাবি আদায়ে সিলেটে আন্দোলন আরও জোরদার করতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
আগামী শুক্রবারের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে শনিবার থেকে সিলেট জেলায় সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘটের আলটিমেটাম দেন তারা।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
দাবিগুলো হলো— বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকের অবসান, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ।
সমাবেশে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, মালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলো ন্যায্য এবং যৌক্তিক। সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি থমকে যাবে।
সমাবেশে তিনি বলেন, ডিসি কোয়ারির বিষয়ে অংশীজনকে নিয়ে সভা ডেকেছেন। তবে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহন শ্রমিক নেতা কেউ তার বৈঠকে যাননি। নির্যাতন-নিষ্পেষণ করার পর ডিসি বলছেন, এখন এসো। তাই সবাই ঘৃণাভরে এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিকে প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পাথর উত্তোলন বা ভাঙার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা পরিবেশের বিপক্ষে নয়, পক্ষে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা সিলেটের সাধারণ মানুষেরও পক্ষে। আদালতের নির্দেশ আছে, ক্রাশার মিলগুলোর জন্য আলাদা জোন করে দিতে হবে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজি ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি হাজি আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক মো. আবদুস সালাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এ বিষয়ে মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি সমাধানে জামায়াত-বিএনপি নেতা, মিল মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা সবাই একমত হয়েছি, ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বৈধভাবে যেভাবে সরকার রাজস্ব পায়, সেভাবে বালু-পাথর উত্তোলন ও ক্রাশার মেশিন চালানোর একটা ব্যবস্থা করার জন্য। সে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আলোচনা যেখানে চলমান রয়েছে, সেখানে আন্দোলন বা কারও অপসারণ চাওয়া কতটুকু যৌক্তিক। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী কালবেলাকে বলেন, আমাদের দাবি হলো জীববৈচিত্র ও পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, সেভাবে উচ্চপর্যায়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বালু-পাথর উত্তোলন করা। আবার পাথর উত্তোলন না করায় কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেটিও দেখা। সবকিছু বিবেচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই পরিস্থিতি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন।
সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির প্রবীণ নেতা সাবেক মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটি দলের কোনো কর্মসূচি নয় বা এতে দলের কেউ জড়িতও নয়।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তিনিই (আরিফুল হক) ভালো বলতে পারবেন, কেন আন্দোলন করছেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরীর কোনো আলাপ হয়নি বলে জানান জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এখন হঠাৎ করে আমার অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক।
মন্তব্য করুন