কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নবীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ‘বিভাগ ফি’ ও ‘সোসাইটি ফি’ বাবদ আয় হয় প্রায় ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। গত ৯ বছর এ খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগে জমেছে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। তবে এ বিপুল অর্থ কোথায় খরচ হলো, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তর বলছে, বিভাগগুলো কখনোই আয়-ব্যয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয় না। তাদের আহ্বান জানানো হলেও বেশির ভাগ বিভাগ অডিট দিতে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় নতুন প্রশাসন বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছে, তবে জবাব না এলে আবার চিঠি দিতে বলা হয়েছে।
অর্থ দপ্তরের উপপরিচালক এস এম মাহমুদ বলেন, ‘আগে কখনো এ হিসাব চাওয়া হয়নি। এখন নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। বিভাগগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ সাড়া দিচ্ছে। তবে কয়টা বিভাগ হিসাব দিয়েছে, সেটা বলা যাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ফিগুলো বিভাগ সরাসরি আদায় করে। তবে বিভাগগুলো প্রশাসনকে কোনো অডিটও দেয় না। তারা সরাসরি অডিটের বিরুদ্ধে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি, এখন সরাসরি অডিট হবে না, আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শেষ করে সবকিছু ক্লিয়ার হলে তারপর সরাসরি অডিট বসবে।’
রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়, ১৯ বিভাগে কোটা ছাড়া প্রতি বছর ১ হাজার ৩০ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ফির পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হলেও বেশি ফি নেয় সিএসই, আইসিটি ও ইংরেজি বিভাগ—প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টাকা। সবচেয়ে কম ফি নেয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ—১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, লোকপ্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও ফার্মেসি বিভাগ আয় করে ১ লাখ ৮০ হাজার করে। অন্যদিকে, পদার্থ বিভাগ আয় করে ২ লাখ ৫০ হাজার, গণিত ২ লাখ ১০ হাজার, রসায়ন ২ লাখ, পরিসংখ্যান ১ লাখ ৭৫ হাজার, বাংলা ১ লাখ ৯২ হাজার এবং আইন ও সাংবাদিকতা বিভাগ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভাগের সোসাইটির ভিপিদের (সহসভাপতি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো ইভেন্ট হলে বিভাগকে একটা চাহিদা দিয়ে থাকি সোসাইটি। সে অনুযায়ী একটা বাজেট দেয় বিভাগ। কিন্তু কত টাকা জমা আছে বা খরচ হয়েছে, সেটা জানেন না তারা।
বিভাগগুলোর চেয়ারম্যানরা জানান, আদায়কৃত ফি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়—শিক্ষা সফর, বিভাগীয় উইক, অনুদান, অতিথি শিক্ষক ইত্যাদির পেছনে। কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রশাসনকে দেওয়া হয় না। তাদের কাছে প্রশাসনের কাছ থেকে বিভাগের আয়-ব্যয়ের বিষয়ে কোনো চিঠি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি এবং তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বিভাগের হিসাব বিভাগেই রাখা হয় বলেও জানান তারা।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জামান মিলকি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত ফি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এ আয়গুলো বিভাগের নিজস্ব তহবিল। সেজন্য আয়-ব্যয় আমরা প্রশাসনকে জানাই না।
প্রশাসন থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে কোনো চিঠি পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আয়-ব্যয়ের বিষয়ে নয়। ওটা ছিল ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিসাব। অধ্যাপক মিলকি আরও বলেন, আমরা প্রশাসনকে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেব কি না, তা একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা করেছি। কমিটির সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা প্রশাসনকে বিভাগের হিসাব দেখাতে ইচ্ছুক নই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিয়মিত সোসাইটি ও বিভাগ ফি দেন; কিন্তু কবে কী ইভেন্ট হয়েছে, কোথায় কত খরচ হয়েছে, তা জানানো হয় না। বিভাগে কখনো কোনো বাজেট দেখানো হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে যে ফি আদায় করা হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়। ওই আয় থেকে বিভাগের প্রয়োজনীয় খরচ করা হয়। আর হিসাব দেওয়ার প্র্যাকটিস এখানে ছিল না। সামনে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি তহবিল ও বিভাগ একসময় অডিটের আওতায় আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই অডিটের বাইরে নয়।
মন্তব্য করুন