মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদের একদিন আগে একসঙ্গে ৩ ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা

বরগুনার পাথরঘাটায় তিন সন্তানের কবরের পাশে বাবা। ছবি : কালবেলা
বরগুনার পাথরঘাটায় তিন সন্তানের কবরের পাশে বাবা। ছবি : কালবেলা

নাসির উদ্দিন ও শিউলি আক্তার দম্পতির বাড়িতে ঈদের দিনেও চলছে আহাজারি। বাড়ির সদস্যরা তো বটেই, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী যারা এসেছেন, তারাও কাঁদছেন। এই বাড়ির তিন সন্তান শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল পৌনে ৮টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সোনার বাংলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

ঈদের একদিন আগে একসঙ্গে ৩ ছেলের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা-বাবা। মা শিউলি আক্তার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সন্তান হারানোর কষ্টে।

নাসির উদ্দিন শ্রমিকের কাজ করেন রাঙামাটি। তিন ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে সেখান থেকে এসে ছেলেদের হারানোর কষ্টের কথা বলছিলেন, আর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন।

নিহত তিন ভাই হলেন- মো. নাঈমুজ্জামান খান শুভ, মো. শান্ত খান ও মো. নাদিম খান। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাইশকুরা ইউনিয়নের টিকিকাটা গ্রামে তাদের বাড়ি। দুর্ঘটনার পরপরই তিন ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তারপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, শুভ ঢাকার সাভারে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। তার ছোট ভাই শান্ত গুলশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং নাদিম গুলশাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত বছর সাত মাস বয়সী তাদের আরেক ভাই পানিতে ডুবে মারা গেছে। ফলে একই পরিবারের চার ভাইয়ের কেউ আর রইলো না।

শুভ মাত্র চার দিনের ছুটি পেয়ে ঈদ করতে এসেছিল বাড়িতে। তবে তার সহকর্মী বন্ধু রাকিব ঈদে ছুটি পাননি। শুভ ঢাকা থেকে আসার সময় রাকিব নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা নতুন পোশাক শুভকে দিয়েছিলেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য। রাকিবের বাড়ি পাশের পাথরঘাটা উপজেলার মানিকখালী গ্রামে।

নিহতদের দাদি মনোয়ার বেগম কালবেলাকে বলেন, আমার নাতি শুভ প্রতি বছরের মতো নতুন শাড়ি আমার জন্য নিয়ে এসেছে। ঈদের দিন ঠিকই নতুন শাড়ি পড়েছি কিন্তু আমার নাতি নেই। এমনটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন তিনি।

বাবা নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমার জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার মতো হতভাগা আর কে আছে। আজকে একসঙ্গে আমার তিন ছেলে মারা গেল, গত বছর আমার ছোট ছেলে (৭ মাস) পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমার জীবনের কী অপরাধ ছিল জানি না। আমার চার ছেলের কেউ আজকে নেই।

নিহত শুভর স্ত্রী সূচনা আক্তার জানান, তার সঙ্গে এতটাই ভালো সম্পর্ক ছিল যেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। কোনো দিন তাকে ছাড়া ঈদ করেননি। কেউ কিছু খাবার দিলেও সেটা তার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসত।

এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রাক্তনের পাশে বসে বর্তমান প্রেমিকার নামে পূজা

৫ আগস্টের পর থেকে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ নেই : উপদেষ্টা আসিফ

কক্সবাজার ইস্যুতে ‘গরম’ ছিল এনসিপির সাধারণ সভা 

সিলেটে পাথর লুটের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘মৃত ভোটারদের’ সঙ্গে চা পান করলেন রাহুল গান্ধী

টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস, সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

সাঈদীকে নিয়ে জামায়াত আমিরের বিবৃতি

ট্রেন আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার প্রশ্ন

গাজীপুরে এক বছরে বন্ধ ১০৬ কারখানা, অপরাধে জড়াচ্ছেন বেকার শ্রমিকরা

১০

সুপার কাপে নাটকীয় জয়ের পরও হতাশ পিএসজি কোচ

১১

ভারত যেন মুখোমুখি না হয় পাকিস্তানের—সাবেক পাক ক্রিকেটারের প্রার্থনা

১২

প্রধান বিচারপতির বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত

১৩

রাশিয়া / উদ্যান রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয়রা

১৪

হলিউডে অভিনয় করবেন জাহিদ হাসান?

১৫

সেপটিক ট্যাংকের শাটার খুলতে গিয়ে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

১৬

দুদকের অভিযানের পরে নড়েচড়ে বসেছে সিলেটের প্রশাসন

১৭

‘অপুকে নির্যাতন করে উপদেষ্টার নাম বলানো হয়েছে’

১৮

হাসপাতালে হিরো আলম

১৯

‘আসছে পানি ভাসছে মানুষ’, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

২০
X