ঠাকুরগাঁওয়ে চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধের দাবিতে সাঁওতাল, ওঁরাও, মশহুর সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরা গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন।
‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, কিছুসংখ্যক উপজাতি পরিবার এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চোলাই মদ তৈরি করে বিক্রি করছে। এতে পুরুষদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে পরিবারে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার সাঁওতাল, ওরাঁও, মুন্ডা ও মুসোহর জনগোষ্ঠীর বসবাস করে থাকে। এদের বেশিরভাগই সাঁওতাল এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের।
গত কয়েকদিন ধরে সেখানকার ১০-১২টি গ্রামের নারী শিশু ও কিশোর বয়সের মেয়েরা মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করছেন।
গত ১৮ আগষ্ট রাতে শহরের কলেজ পাড়া মহল্লার স্টিফান তির্কী নামে ‘ওরাঁও’ জনগোষ্ঠীর এক সদস্য সন্ত্রাসীর কর্তৃক নিমর্মভাবে খুন হন। এ ঘটনাটি এলাকার নৃ-জাতিগোষ্ঠীর নারীদেরকে আহত করে।
নয়মী টপ্য নামে মধ্য বয়সী এক নারী বলেন, ‘ষ্টিফান তির্কী তো চলেই গেছেন কিন্তু তার দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রী ভেরোনিকার এখন কী হবে? ভেরোনিকারা আর কত দিন এভাবে ‘চোখের জল’ ফেলবে!’
জেসপিনা এক্কা নামে আরেক নারী বলেন, ‘স্বামী হারানোর কষ্ট আমি হারে হারে ভোগ করছি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কীভাবে দিন কাটছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানে।’
ওরাঁও, সাঁওতালরা বিভিন্ন উৎসবের সময় ঘরেই চোলাই মদ তৈরি করে তা পান করে। কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে যে চোলাই মদ তৈরি করা হচ্ছে তা একেবারেই ভিন্ন বলছেন সামিয়েল মার্ডি নামে একজন।
সামিয়েল মার্ডি বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে চোলাই মদ তৈরি করে বিক্রির ফলে ওরাঁও, সাঁওতাল গ্রামগুলোতে পুরুষদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে। ঘরে ঘরে মাতাল পুরুষদের হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। অন্যদিকে পরিবারগুলো চরম দুঃখ, কষ্ট ভোগ করছে।’
‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা সভাপতি জ্যাকোব খালকো বলেন, বিশেষ দিন বা উৎসবের সময় ঘরেই চোলাই মদ তৈরি করে তা পান করে ওরাঁও, সাঁওতালরা। তবে এই সুযোগে এক শ্রেণির মতলববাজরা আমাদের জনগোষ্ঠীর লোকদের সর্বনাশ করছে। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ব্যক্তিদের জায়গা-জমি লিখে নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নারীরদেরকেও ছাড় দিচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের সাওঁতাল গৃহবধূ বিউটি সরেনকে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণের ঘটনা সবারই জানা।
তবে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, ঘরে চোলাই মদ তৈরি উপজাতিদের একটা ঐতিহ্য। এটা পুলিশের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে কেউ যদি নারী নির্যাতনের অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
মন্তব্য করুন