মমিনুল ইসলাম, মতলব উত্তর (চাঁদপুর)
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি : কালবেলা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি : কালবেলা

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৬৪ কিলোমিটার বাঁধের মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ১০ কিলোমিটার এবং মেঘনার নদীর পশ্চিম পার্শ্বে ৫ কিলোমিটার এলাকা ভাঙছে।

এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি একসময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

জানা গেছে, ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত দুবার এ বাঁধটি ভেঙে যায়। তখন কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয় অঞ্চলের মানুষে। পরে ফের মেরামত করা হয় এই বেড়িবাঁধটি।

সরেজমিন জানা যায়, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও প্রবল স্রোতে মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে সোনারপাড়া-সানকিভাঙ্গা, চরমাছুয়া-জনতার বাজার এবং ধনাগোদা নদীর ষাটনল থেকে কালীপুর, নবীপুর-হাফানিয়া-খাগুরিয়া, ঠেটালিয়া-সিপাইকান্দি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চল এলাকার বোরচর, চরউমেদ, নাছিরারচরে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে হুমকির মুখে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় লোকজনের। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনকবলিত এলাকায় দীর্ঘদিন ড্রেজার দিয়ে দিনেরাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছিল। যার প্রভাবে এখন নদীর এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছ। কালিপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, এই এলাকায় নদীর আচমকা ভাঙনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাড়িঘর, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েহ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল হুমকির মুখে রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। হঠাৎ করে ভাঙন এমন তীব্র হবে, আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

সোনারপাড়া এলাকার মনির হোসেন খান বলেন, মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে উত্তর দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

খাগুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন বলেন, ধনাগোদা নদীর ভাঙনে খাগুরিয়া, হাপানিয়া ও নবীপুর এলাকার অনেক পরিবার এরই মধ্যে জমি হারিয়ে পথে বসেছে। কখন যে আমাদের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, হাটবাজার, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায় সেই আতঙ্কে আছি। এমনকি মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধটিও ঝুঁকিতে রয়েছে।

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার বলেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালিপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বালুমহলের নামে ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন বলেন, এই মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে। মেঘনা ও ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ঘেঁষা ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি অঞ্চলে নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘরসহ ফসলি জমি।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর সেলিম শাহেদ বলেন, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাব।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি কালবেলাকে বলেন, নদীভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। সামনের দিকেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১০

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১১

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১২

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

১৩

যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন ইউনূস-রুবিও

১৪

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, অতঃপর...

১৫

ইরানে একাধিক ইউরোপীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১৬

ঢাবি শিক্ষার্থী সৌমিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

১৭

ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হাবিপ্রবিসাসের অফিসরুম ভাঙচুর

১৮

গাজাবাসীর জন্য বিশেষ ভিসা চালু করতে স্টারমারকে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

১৯

পাবিপ্রবিতে শিক্ষাবৃত্তি ও গবেষণা প্রণোদনা প্রদান

২০
X