

দীর্ঘদিন জাতীয় দলের জার্সি থেকে দূরে থাকা যেন নতুন করে আলো জ্বালিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার ব্যাটার কুইন্টন ডি ককের ভেতরে। মাঠে আচমকা ঝড়ে ফিরে আসা সেই পুরোনো আগ্রাসী রূপ যেন মনে করিয়ে দিল—দক্ষিণ আফ্রিকার এই উইকেটকিপার–ব্যাটার এখনও শেষ হয়ে যাননি। মুল্লানপুরে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে তাঁর ৫৭ বলে দাপুটে ৯০ রানের ইনিংস শুধু ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দেয়নি, বরং তুলে এনেছে তাঁর অনুপস্থিতির সময়ে জমে ওঠা মানসিক লড়াইয়ের গল্পও।
টি–টোয়েন্টি দলে ফিরলেও শুরুটা সুখকর ছিল না। নামিবিয়ার বিপক্ষে নিস্তেজ ব্যাটিং, পাকিস্তান সফরের টানা ব্যর্থতা, তারপর কাটকে প্রথম ম্যাচে শূন্য—সব মিলিয়ে যেন ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচটি বদলে দিল সবকিছু। ম্যাচশেষে ডি কক স্বীকার করলেন, তাঁর এই পরিবর্তনের শুরুটা অনেক আগেই—যে সময়টায় তিনি জাতীয় দল থেকে দূরে ছিলেন।
ডি কক বললেন, “অবসরের আগের সময়ে দলের জন্য জেতার ক্ষুধাটা হারিয়ে ফেলছিলাম। সেই সময়টা দূরে থাকা আমার ক্ষুধাটা ফিরিয়ে দিয়েছে।”
যেখানে তরুণ বয়সে নিজেকে প্রমাণ করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য, সেখানে অভিজ্ঞতার দিনগুলোতে একঘেয়েমিই তাঁর শক্তি শুষে নিয়েছিল। একই প্রতিপক্ষ, একই সিরিজ—এগুলো তাঁকে ক্লান্ত করে তুলেছিল। আর তাই খানিক বিরতি তাঁকে বুঝিয়েছে প্রোটিয়াস জার্সির প্রকৃত মূল্য।
সেসময়ে নিজের মানসিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে ডি কক বলেন, “এভাবে মাঠে নামার অনুভূতি আগে কখনো হয়নি। এখন প্রতিটা ম্যাচ জেতার জন্য খেলছি। দূরে থাকার সময়টা বুঝিয়েছে, আমি আসলে কী হারাচ্ছিলাম।”
বিরতির আগে ব্যাটিংয়ে তাঁর মধ্যে এক ধরনের ক্লান্তি চলে এসেছিল। এবার ফিরে এসে সেই ক্লান্তির জায়গা নিয়েছে তীব্র ক্ষুধা, পরিশ্রম আর নিজের সেরাটা দেওয়ার তাগিদ।
মুল্লানপুরে ভারতের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং প্রমাণ করে—ডি কক এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার টি–টোয়েন্টি পরিকল্পনার মূল স্তম্ভ।
বিশেষ করে আর্শদীপ সিং কিংবা বুমরাহের মতো বিশ্বমানের পেসারের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী ফুটওয়ার্ক দেখিয়ে তিনি যেন নিজেকেই পুনরুদ্ধার করলেন।
তিনি বলেন,“প্রথম ম্যাচে যেভাবে আউট হয়েছিলাম তাতে খুব বিরক্ত ছিলাম। জানতাম, আর্শদীপ–বুমরাহর মতো বোলারদের মুখোমুখি হলে সঠিক পজিশনে না থাকলে তারা আমাকে টার্গেট করবেই।”
ডি কক জানান, এই প্রত্যাবর্তন কোনো আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিরতিটা তাঁর শরীর–মন দুটোতেই নতুন শক্তি এনে দিয়েছে। “বিরতিটা আমার জন্য খুব দরকার ছিল। এখন মনে হচ্ছে আরও বহুদিন খেলতে পারবো। আগের মতো মানসিক ক্লান্তি নেই, শরীরও ভালো আছে। দলকে আরও কিছু দিতে চাই।”
২০২৪ বিশ্বকাপের রানার্স–আপ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে আবার বড় মঞ্চ অপেক্ষা করছে ২০২৬ সালে। সেখানে ডি ককের এই ফিরে পাওয়া ফর্ম দলকে যে বাড়তি শক্তি দেবে, তা নিয়ে সংশয় নেই।
প্রোটিয়াসদের ম্যানেজমেন্টও নিশ্চয়ই স্বস্তি পাবে—কারণ তাদের অভিজ্ঞ ওপেনার আবার ফিরেছেন সেই পুরোনো, ভয়ংকর রূপে।
মন্তব্য করুন