আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আখাউড়ায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট যেন ‘ওপেন সিক্রেট’

আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন। ছবি : কালবেলা
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন। ছবি : কালবেলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাঁকডাক যেন ‘ওপেন সিক্রেট’। অনলাইন মাধ্যমে ছাড়া টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। পূর্বাঞ্চল জোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া ও আজমপুর জংশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। তবে যে পরিমাণ আসনযুক্ত টিকিট বরাদ্দ রয়েছে তার ৬/৭ গুণ বেশি আসনবিহীন টিকিট বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বুকিং ক্লার্করা।

আখাউড়া ও আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে বড় সমস্যা টিকিট কালোবাজারি। শতভাগ অনলাইনে টিকিট দেওয়ার কারণে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাওয়া যায় না। রেলওয়ের এসব টিকিট স্টেশনের পাশের চা দোকান কিংবা কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েই কালোবাজারিরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করেন চড়া দামে। এ দুটি স্টেশনে টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য ওপেন সিক্রেট হলেও নীরব ভূমিকায় রেলওয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এর জন্য সাধারণ যাত্রীদের টিকিটের নির্ধারিত মূল্য থেকে তিন/চারগুণ অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট নিয়ে রেলওয়ের আইনে কেউ কেউ আবার পড়ছেন বিপাকে।

ভুক্তভোগীরা জানান, রেলওয়ের ওয়েবসাইট টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করার পর যাত্রীরা সার্ভারে ঢুকতেই তাদের দেখানো হচ্ছে টিকিট নেই। অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে টিকিট। পরবর্তীতে তা দালালদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। বিনিময়ে টিকিট প্রতি গুণতে হচ্ছে তিন/চারগুণ বাড়তি অর্থ। আখাউড়া ও আজমপুর থেকে ঢাকা টিকিটের মূল্য ১৭০ টাকা। কিন্তু কালোবাজারে বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৬শ টাকায়, চট্টগ্রামের ২৪০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫শ টাকা এবং সিলেটের ২১০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪শ টাকায়। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎবের সময় আরও বেশি দামে বিক্রি হয় এসব টিকিট।

আখাউড়া ও আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম-জামালপুর রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে মহানগর এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলি, তূর্ণা এক্সপ্রেস, নিশিতা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, উদয়ন এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস ও বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এর মধ্যে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে আখাউড়া থেকে ঢাকায় ৪৮টি টিকিট, মহানগর গোধূলিতে ২৫টি, উপকূল এক্সপ্রেসে ৫৫টি, চট্টলা এক্সপ্রেসে ২০টি, তূর্ণা এক্সপ্রেসে ৫টি, নিশিতা এক্সপ্রেস ৫টি, বরাদ্দ রয়েছে। আর সিলেটের দিকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে আখাউড়া থেকে সিলেটে ২০টি উদয়ন এক্সপ্রেসে ২০টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। আর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি থাকলেও আখাউড়া থেকে কোনো টিকিট বরাদ্দ নেই। ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন যাত্রাবিরতি করে কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস। আজমপুর থেকে ঢাকায় কালনী এক্সপ্রেসে ১০টি, জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস ৪০টি ও পারাবত এক্সপ্রেসে ৩৫টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে।

বিপরীত দিকে আখাউড়া থেকে চট্টগ্রামের মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ২৫টি টিকিট, মহানগর প্রভাতী ট্রেনে ২০টি, চট্টলা এক্সপ্রেসে ৫০টি ও তূর্ণা এক্সপ্রেসে ৫টি, উদয়ন এক্সপ্রেস ২০টি ও চট্রলা এক্সপ্রেসে ৩০টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। আর আজমপুর থেকে সিলেটে বরাদ্দ রয়েছে কালনী এক্সপ্রেস ১০টি পারাবত এক্সপ্রেস ৫০টি ও জয়ন্তীকা এক্সপ্রেসে ১৫টি টিকিট। আখাউড়া ও আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সব ট্রেন মিলিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট বরাদ্দ রয়েছে মোট ৬৪৩টি।

সম্প্রতি আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় পার্শ্ববর্তী বিজয়নগর উপজেলার রেহান উদ্দিন নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিবার নিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কাউন্টারে গিয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট ছাড়া কোনো টিকিট পাওয়া যায় না। আর তাই বাধ্য হয়েই চড়া দামে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হয়েছে। স্টেশনের পাশে চায়ের দোকানে বসা এক লোকের কাছ থেকে আমি তিনটা টিকিট ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিয়েছি। এই টিকিটগুলি আসল না নকল তাও বুঝার উপায় নেই।

উপজেলার মোগড়া এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন বলেন, আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট পেয়েছেন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। পুরো টিকিট ব্যবস্থা কালোবাজারিরা দখল করে রেখেছে। রিকশা থেকে নেমেই এই ঢাকা ঢাকা বলে হাঁকডাক শুনা যায়। ঢাকা যাওয়ার উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি টিকিট সাড়ে ৪শ টাকা দিয়ে নিয়েছেন তিনি।

শফিকুর রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, স্টেশনে টিকিট কাউন্টার রাখার কী দরকার ছিল? কালোবাজারিদের জন্য একটা রুম দিয়ে দিলেই ভালো হবে। তারা শান্তিতে টিকিট দিতে পারবে।

এ বিষয়ে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে শতভাগ টিকিট অনলাইন মাধ্যমে দেওয়ার পর থেকে আমরা কাউন্টার থেকে শুধু আসনবিহীন স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করে থাকি। কালোবাজারিরা টিকিট কেটে নিজেরাই প্রিন্ট করে। মাঝে মাঝে যাত্রীদের কাছ থেকে এমনও অভিযোগ পাওয়া যায় যে কালোবাজারিরা টিকিট কেটে প্রিন্ট করার আগে এডিট করে হাফ টিকিটকে ফুল টিকিট দেখায়। আবার আজমপুর থেকে কাটা টিকিট সিলেট থেকে দেখায়। আর এসব করে শুধু অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার জন্য। তবে ট্রেনে টিকিট দেখার দায়িত্বে থাকা লোকজন ঠিকি ধরতে পারেন।

তিনি বলেন, স্টেশন বা আশপাশের যারা টিকিট বিক্রি করে তাদের হাতে টিকিট আসার আগে এক-দুই হাত বদল হয়ে তাদের হাতে পৌঁছায়।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক মো. নূর নবী কালবেলাকে বলেন, শতভাগ অনলাইনে টিকিট দেওয়ার কারণে আমাদের হাতে কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্টেশনের ভেতর বা আশপাশে টিকিট কালোবাজারি নেই। আমার চোখেও পড়ে না। তারা দূরে বাজারের ভেতরে কম্পিউটার দোকানে টিকিট প্রিন্ট ও বিক্রি করে বলে আমার মনে হয়।

এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, আমরা সারাক্ষণই স্টেশনসহ আশপাশে নজরদারি করে থাকি যেন কোনো টিকিট কালোবাজারি না হয়। চেষ্টা করছি যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়মিত পুলিশ থাকে না। প্রয়োজন হলে পাঠানো হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে চীনা শ্রমিকের মৃত্যু 

শৈশবের ক্লাবকে বিদায় করে ক্ষমা চাইলেন চেলসি স্ট্রাইকার

কেন্দ্রীয় নয়, নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডে প্রকাশ হবে এসএসসির ফল

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কুমিল্লা বোর্ড, এইচএসসি নিয়ে সিদ্ধান্ত সন্ধ্যায়

চীন সফরে যাচ্ছে জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল

উদ্বোধনের আগেই ভেসে গেল নবনির্মিত সড়ক

মধ্যপ্রাচ্যে আরও ঘাঁটি বানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, বাড়াচ্ছে অস্ত্রের মজুত

ব্যবসায়ীকে হত্যায় জড়িত ৭ ভাই-ভাতিজা গ্রেপ্তার

সিরিজ হারের পরও আশাবাদী মিরাজ

১৫ কিমি দূরে ভেসে উঠল আসিফের মরদেহ

১০

আ.লীগকে ফেলে দেওয়ার জন্য যা দরকার ছিল, সব করেছি : সিবগাতুল্লাহ

১১

এখন আর শেখ হাসিনার পালানোর পথ নেই : প্রেস সচিব 

১২

ইইউর অভিযানে চীনের বিরুদ্ধে জার্মানির ভয়ংকর অভিযোগ

১৩

ভয়াবহ বন্যায় প্রস্তুত ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম

১৪

অডিও যাচাই করল বিবিসি / আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন হাসিনা

১৫

ঠান্ডা পানি কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর? কী বলছেন চিকিৎসকরা

১৬

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি

১৭

বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এলো যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের চিত্র

১৮

টিভিতে আজকের খেলা

১৯

আঙুল ফোটানো কি সত্যিই ক্ষতিকর? কী বলছে চিকিৎসাবিজ্ঞান

২০
X