ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলায় ঘটনাস্থলে না থেকেও নবীনগর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি মোস্তাক আহমেদ উজ্জলকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাংবাদিককে মিথ্যা অভিযোগে আসামি করায় নবীনগরজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
সাংবাদিক মোস্তাক আহমেদ উজ্জল উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, বাড়াইল গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলে।
জানা যায়, নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা ও বাড়াইল গ্রামের দুপক্ষের লোকজনের পূর্ব বিরোধের জেরে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বাড্ডা গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়াইল গ্রামে হামলা চালায়। পরে বাড়াইল গ্রামের লোকজনও পাল্টা ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে বাড্ডা গ্রামের আজিজ মুন্সি (৫২) নামে একজন নিহত এবং উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সাহেরা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১ মে) ৩৩ জনকে এজাহারভুক্ত ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে নবীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ১ নম্বর আসামি করা হয় মোস্তাক আহমেদ উজ্জলকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন আজিজ মুন্সি নরসিংদী থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। সেসময় বিকাল ৩টার দিকে তাকে উপজেলার থোল্লাকান্দি মসজিদ সংলগ্ন পাকা রাস্তা হতে আটক করে তোরাগের খালপাড় কাঁচা রাস্তায় নিয়ে যায়। পরে হত্যার উদ্দেশে মোস্তাক আহমেদ রামদা দিয়ে তার মাথার ডান দিকে জখম করে।
এদিকে বাদী সাহেরা বেগম বলেন, মোস্তাক আহাম্মেদ উজ্জলই মূল হোতা। সে দূর থেকে সব কিছু করে। এ হত্যার সঙ্গে সে জড়িত।
উজ্জল দূরে থেকে সরাসরি হত্যা করল কীভাবে? তাকে ১ নম্বর আসামিই বা দিলেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মোস্তাক আহমেদ উজ্জল বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার দিন আমিসহ আমার এলাকার আরও কয়েকজন ব্যক্তিগত কাজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা সদরে ছিলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এডিসির (রাজস্ব) সঙ্গে দেখা করে ৩টা ৫২ মিনিটে ইউসিবি ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখায় ম্যানেজারের রুমে ছিলাম। সিসিটিভির ফুটেজ এবং আমার মোবাইল লোকেশন ট্রেকিং করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, এলাকায় না থেকেও হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি হয়ে গেলাম। মামলার বাদী কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমাকে হয়রানি করতে আসামি করেছে।
উজ্জলকে মিথ্যা অভিযোগে হত্যা মামলায় আসামি করায় নবীনগর প্রেস ক্লাবসহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা জানি- ঘটনার দিন উজ্জল সারাদিন জেলা সদরে ছিলেন। সেখান থেকে কী করে তিনি একটা মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারেন? তাকে হয়রানি করতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসামি করা হয়েছে। অবিলম্বে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হোক, নতুবা গোটা জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
তারা আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জানতেন- ঘটনার সময় উজ্জল নবীনগর ছিল না। এসব জানার পরও কী করে পুলিশ তার নামে মামলা নিয়েছে? এমন প্রশ্ন গণমাধ্যম কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে।
নবীনগর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক কালবেলাকে বলেন, বাদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এজাহার নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করে এজাহারে উল্লিখিত কেউ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন