‘মানবদেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ’ সন্দেহে যশোরে অনুসন্ধানে নেমেছে বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধিদল। শুক্রবার (২ মে) সকালে যশোরে পৌঁছায় দলটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন- ডাক্তার ফয়জুল ইসলাম, শাহ আফরোজ হাসনা আক্তার, নূরে আলম, ফাইয়াদ আহদেম কান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. সানাউল্লাহ ও গাড়িচালক। আইইডিসিআরের উচ্চপর্যায়ের এই দলটি সন্দেহভাজন ব্যক্তির রক্ত ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করবে।
আইইডিসিআরের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি যশোরে ‘এক শিশুর দেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের’ সন্দেহজনক কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের আট বছর বয়সী এক শিশু শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে সম্প্রতি যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। শিশুটির উপসর্গ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষজ্ঞ দলটি যশোরে আসে।
আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল শিশুটির শরীর থেকে রক্ত ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পোল্ট্রি খামার এবং আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরে এসেছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রক্ত ও নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর বার্ড ফ্লু সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
এদিকে, এর আগে গত ১২ মার্চ যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। ঢাকার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ হলে ১৩ মার্চ খামারের ৬টি শেডের দুই সহস্রাধিক মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়।
খামার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৩ মার্চ ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর খামারের ৬টি শেডের ২ হাজার ৭৮টি মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়। বর্তমানে খামারে কোনো মুরগি নেই। শেডগুলো খালি করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।
সে সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাব। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোল্ট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে খামারিদের সংগঠনকেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলোকে সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত আছে। বাংলাদেশে খামারে ২০০৭ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে সর্বশেষ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।
ওই ঘটনার দেড় মাস পর যশোরে মানবদেহে সংক্রমনের সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক জানিয়েছেন, বার্ড ফ্লু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি টিম যশোরে এসেছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গত মার্চে যশোর সরকারি মুরগির খামারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেটি লো প্যাথোজেনিক। তবে ওই ঘটনার পর খামারিদের সতর্কতার সঙ্গে মুরগি পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো খামারে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুয়ের কারণে মেরে ফেলা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।
মন্তব্য করুন