ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার এক বছর আজ মঙ্গলবার। বছর ঘুরলেও এখনো সাবেক এ এমপির মরদেহের খণ্ডাংশ পায়নি স্বজনরা। তারা আনোয়ারুল আজীমের খণ্ডিত দেহাবশেষ দেশে এনে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে চান তারা।
দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাবেক এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
জানা যায়, গত বছরের ১২ মে ভারতের কলাকাতায় যান সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেখানে তিনি কলকাতার বরাহনগর এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। এরপর ১৩ মে বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। সেই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নিখোঁজের ৯ দিন পর ২২ মে ভারতের নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের বিউ-৫৬ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে কলকাতার পুলিশ। এরপর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এরপর বাগজোলা খালে মেলে আনারের হাড়। সঞ্জিভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকে মেলে প্রায় ৪ কেজি মাংস। উদ্ধার হওয়া দেহাংশের সঙ্গে মিলে যায় আনারের মেয়ে ডরিনের ডিএনএ। হত্যার ৮৭ দিনেই মামলার পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি অভিযোগপত্র দেয় বলে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন সাবেক এমপি আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এখন পর্যন্ত সাবেক এমপি আনার হত্যার ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ জনকে বাংলাদেশে ও দুজনকে ভারত ও নেপালে আটক করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তে নেমে খুলনা অঞ্চলের চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ও তার ভাতিজা তানভীর এবং খুনের মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শাহিনের বান্ধবী সেলেস্তিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়াও ধরা পড়ে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু। খাগড়াছড়ির পাহাড় থেকে দুই ভাড়াটে খুনি ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক রয়েছে জিহাদ ও সিয়াম। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৭ আসামির মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারউক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও এরইমধ্যে ৯ বার পিছিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ।
কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টার মাইন্ড আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। সে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, স্বর্ণ চোরাচালাল নিয়ে শাহীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন আনার।
সাবেক এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ভারতে গিয়ে ডিএনএ দিয়েছি। মরদেহের খণ্ডাংশের সঙ্গে তার ডিএনএ মিলেছে বলে ভারতের সিআইডি জানিয়েছেন। কিন্তু অফিশিয়ালভাবে কোনো কাগজ এখনো পাইনি। ভারতের সিআইডি কয়েকবার চিঠি দিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কোন সাড়া দেওয়া হচ্ছে না। ডিএনএর রিপোর্টটি খুবই প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘হত্যার সাথে জড়িতরা এরইমধ্যে জামিনের জন্য চেষ্টা করছে। এ মুহূর্তে যদি তাদের জামিন হয়ে যায়, তাহলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটাই চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই এক বছরে বাবার জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ দেশে নিয়ে এসে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে চাই।’
এদিকে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক এমপি আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাহাউল্লাহ খানের মোবাইলে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন