স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বরাবরই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। বাল্যকালে অত্যন্ত শান্তশিষ্ট এবং নম্র ভদ্র বলেই তাকে স্বজন ও প্রতিবেশীরা চিনত। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করলেও প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবারের সাথে গ্রামে আসতেন সাম্য। হঠাৎ তার নৃশংস মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
বুধবার (১৪ মে) সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল এলাকায় সাম্যের গ্রামের বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় দেখা যায়।
এ সময় অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। রাত ১০টার দিকে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থান ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে সেখানেই মা ও দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় সাম্যকে।
জানাজা নামাজে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে মোটরসাইকেলে আঘাতকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়ার বেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিসিসিআই কর্মকর্তা ফখরুল আলম ফরহাদের ছেলে। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ওই হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
সাম্যের প্রতিবেশী নূরনবী সরদার, দুলু সরদার ও কবিরসহ অনেকেই বলেন, সাম্যের মৃত্যুতে আত্মীয়স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশীরাও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক এবং অকাল মৃত্যু সহজে কেউ মেনে নিতে পারছে না। সাম্যকে আমরা অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত ছেলে হিসেবেই দেখেছি। তাকে কেউ এভাবে খুন করতে পারে সেটা ভাবাই যায় না।
নুরনবী সরদার বলেন, সাম্যের পরিবার ঢাকায় বসবাস করলেও প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতো। পরিবারের সঙ্গে সাম্যও আসত। গ্রামে এসে সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশতো। সবাই তাকে ভালবাসতো। ছেলেটির এমন মৃত্যুতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাম্যের বড় ভাই আহসান হাবিব বলেন, ওর সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। উল্লাপাড়ার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আমাদের সবার আদরের ছোট ভাই ও। ওকে এভাবে হারাতে হবে ভাবতেও পারিনি।
সাম্যের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার বাবা ফকরুল আলম ফরহাদ অবসরপ্রাপ্ত বিসিসিআই সার কারখানার কর্মকর্তা। তিনি ২০১২ সাল থেকে সপরিবারে ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বাস করেন। সাম্যের মা চার বছর আগে মারা গেছেন। চার সন্তানের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। সে ঢাবিতে পড়াশোনা করতো। আর বাকি তিন ছেলে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। ফরহাদের গ্রামের বাড়ি সড়াতৈলে তার অন্যান্য ভাইয়েরা বাস করেন।
সাম্যের চাচা হাজি কায়সারুল আলম কায়েস বলেন, গত শুক্রবার ঢাকাতে আমার বড় ভাতিজির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ছিল ঢাকায়। সেখানে সাম্যর সঙ্গে কথা হয়। জানতাম না এটাই হবে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। সাম্যের কী অপরাধ ছিল যে মা হারা এ ছেলেটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এমন মেধাবী ভাতিজার মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি চাই।
বেলকুচি থানার ওসি মো. জাকারিয়া বলেন, নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের মরদেহ রাত পৌনে ৮টার দিকে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। রাত ১০টার দিকে তার নামাজে জানাজা শেষে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন