চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল এপ্রিলের ১০ তারিখে। লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে ২২ মে। লিখিত পরীক্ষা শেষে ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পুরো নম্বর দেওয়ার নাম করে স্কুল ও শিক্ষার্থীভেদে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় দুই এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে।
এ ছাড়াও ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেওয়ার কথা বলে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের কাছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নেওয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটোয়ারীতে এসএসসির দুটি কেন্দ্র ছিল। একটি হলো আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং আরেকটি আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ দুটি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ১ হাজার ৩৮৬ জন। এর মধ্যে আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৯৫ এবং আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এপ্রিলের ১০ তারিখ লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ৮ মে। এরপর থেকে শুরু হয় বিজ্ঞান, মানবিক ও ভোকেশনাল বিভাগের বিভিন্ন ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা। শেষ হবে ২২ মে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পুরো ২৫ নম্বর দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষার্থীভেদে নেওয়া হয়েছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা। কেউ কেউ দিয়েছে কেন্দ্রে দ্বায়িত্বে থাকা শিক্ষককে আবার কেউ কেউ টাকা দিয়েছে নিজ স্কুলের শিক্ষককে বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞান বিভাগের এক পরীক্ষার্থী জানায়, তার সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইউনুস আলীকে ১ হাজার টাকা দিয়েছে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ওই স্কুলের শিক্ষক ইউনুস আলী অথবা অপু মাস্টারকে টাকা দিলেই হবে। ইউনুস ও অপু স্যার মিলেই টাকা নিচ্ছে। দুজনের একজনকে টাকা দিলেই হয়।
ভোকেশনালের আরেক পরীক্ষার্থী জানায়, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনালের মনা স্যার তাদের কাছে ৮০০ থেকে হাজার টাকা নিয়েছে। নইলে মার্ক কম দেওয়া অথবা ফেল করে দেওয়ারও কথা জানা যায়। তাই ভালো মার্কের আশায় মনা স্যারকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে তারা।
মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পরীক্ষার্থী জানায়, তাদের স্কুলের শিক্ষক শাহীন তাদের কাছ থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নিয়েছে। বার আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা জানায়, তাদের স্কুলের বিএসি শিক্ষক শরিফুল ইসলাম তাদের কাছে থেকে ৭০০ করে টাকা নিয়েছে। একইভাবে আলোয়াখোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায়ের পরীক্ষার্থীরাও তাদের এক শিক্ষিকাকে ৭০০ করে টাকা দিয়েছে বলে জানা যায়। হিসাব করে দেখা যায় ওই দুটি কেন্দ্রের মোট ১ হাজার ৩৮৬ পরীক্ষার্থীর কাছে সর্বনিম্ন ৫০০ করে টাকা নেওয়া হলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ।
আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব শরমিন পারভীন বলেন, এ ব্যাপারে জানা নেই। কোনো শিক্ষক যদি টাকা নিয়েও থাকে, তবে তাতে আমি জড়িত নই। তথ্য ও প্রমাণের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব আব্দুল কুদ্দুস বলেন, টাকা নিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। কোনো শিক্ষক যদি টাকা নিয়ে থাকেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুল হাসান কালবেলাকে বলেন, সরকারি বিধিতে এভাবে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যদি এমন কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন