সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শুকায়নি আইলার ক্ষত, আবার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়

শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংড়তলী এলাকার মালঞ্চ নদীর বেড়িবাঁধ। ছবি : কালবেলা
শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংড়তলী এলাকার মালঞ্চ নদীর বেড়িবাঁধ। ছবি : কালবেলা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি সেটি হয় তবে ৩০ মে নাগাদ সেই ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এদিকে আইলার ক্ষত শুকায়নি ১৬ বছরেও। এখনো অরক্ষিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার ৩৩ কিমি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১ এর অধীনে ছয়টি পয়েন্টে তিন কিলোমিটার ও বিভাগ-২ এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি সেটি হয়, সেই ঘূর্ণিঝড় ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় যদি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে রোববার ভোর থেকে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।

উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছুটা দূরে বেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজীবাড়ি, সরদারবাড়ি ও মোড়ল বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।

তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সঙ্গে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান।

তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ২৫ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। টানা ১৫ ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড় ও ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে যায় বহু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের, প্রাণ হারায় শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। মৃত্যু হয় হাজার হাজার গবাদি পশুর। উপকূলজুড়ে অর্থনীতিতে পড়ে বিরূপ প্রভাব।

এরপর পেরিয়েছে দীর্ঘ ১৬টি বছর। তবুও সে ক্ষত শুকায়নি এখনো। আইলার কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। এখনো অরক্ষিত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, অনিরাপদ উপকূলীয় জনপদ। যদিও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে, তবে বাস্তবায়নে দেখা যাচ্ছে ধীরগতি। ফলে এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্যোগের ঝুঁকি। একটি দুর্যোগের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি দুর্যোগ এসে এলোমেলো করে দেয় উপকূলের জনজীবন। এমতাবস্থায় নতুন করে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস উপকূলবাসীকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো রয়েছে অরক্ষিত।

স্থানীয় সুলতান শাহাজান জানান, আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতো। কিন্তু এখন দুর্বল বেড়িবাঁধ ও বাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন কালবেলাকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাউবো-কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, যে কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশাপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এছাড়া আমরা জিও ফিলটার ও জি পলেস্টার মজুত করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের বিভাগে ২০ হাজার জিও ব্যাগের পাশাপাশি ১৫টি জিও রোল মজুত রয়েছে। কোনো স্থানে সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টানা বর্ষণে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ, ক্ষেতেই নষ্ট ফসল

এনসিপির সংস্কৃতি, প্রচার ও প্রকাশনা সেল গঠন

চেয়ারম্যানসহ ৯ ইউপি সদস্যকে শোকজ

রাতে ৫ উপসর্গ দেখা দিলেই সতর্ক হোন, হতে পারে কিডনি রোগের ইঙ্গিত

প্রথমবারের মতো হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি জারি

জুলাই যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানালেন এটিএম আজহার

হংকংয়ে যাত্রাবিরতি প্রধান উপদেষ্টার

যবিপ্রবির সাবেক ভিসি ড. সাত্তারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মার্কিন ভিসা নিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দুঃসংবাদ

নয়াপল্টনে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ দুপুরে

১০

কারামুক্ত হয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এটিএম আজহারুল ইসলাম

১১

ইসরায়েলকে পশ্চিমা এক দেশের কঠোর হুঁশিয়ারি

১২

জুবাইদা রহমানের আপিলের রায় আজ

১৩

কারামুক্ত হলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম 

১৪

মৌরিতানিয়ায় হজযাত্রীদের নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত, যা জানা যাচ্ছে

১৫

চিন্তা ও ভাষায় নিয়ন্ত্রিত হবে শাওনের গাড়ি

১৬

ঢাকায় পৌঁছেছেন ফাহমিদুল ইসলাম

১৭

ঈদুল আজহা কবে জানা যাবে সন্ধ্যায়

১৮

সকালে যে আমল করলে সারাদিন ভালো কাটবে

১৯

উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিটেই বিধ্বস্ত স্টারশিপের রকেট

২০
X