কড়িহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মরহুম আনোয়ারুল আজিমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফিল্ম আর্কাইভস অডিটরিয়ামে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) এ স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গার্লস একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ও মরহুমের সহধর্মণী মিসেস নাদেরা হায়দার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব রাষ্ট্রদুত নাসিমা হায়দার ও নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর গোলাম কিবরিয়া খান কায়কোবাদ।
উল্লেখ্য, কড়িহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মরহুম আনোয়ারুল আজিম ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল নিজ পিত্রালয় নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলবী মনসুর আহমেদ ও মাতা রূপবানু। মৌলবী মনসুর আহমেদ তার সময়ে একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ছিলেন। মরহুমা রূপবানু ছিলেন একজন রত্নগর্ভা জননী। তার ছয় পুত্রের প্রত্যেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট।
তিনি ১৯৪৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি অর্থনীতি পড়তে কলকাতার খ্যাতনামা প্রেসিডেন্সি কলেজে যান। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ দাঙ্গার কারনে তিনি সেখানকার অধ্যয়ন অসমাপ্ত রেখে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান এসবি আইয়ারের অনুপ্রেরণায় একই বিভাগে বিএ (অনার্স) প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ওই বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৫১ সালে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএ পাস করার পর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগদানের কারণে তিনি এলএলবি প্রোগ্রাম শেষ করতে পারেননি।
১৯৫২ সালে তিনি ইপিডিআইসি-তে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের অনুপ্রেরণায় পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। তখন সীমান্ত রক্ষীবাহিনী পুলিশ বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ১৯৫৮ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বর্ডার স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত হন। একই বছর তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজ পিতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি কড়িহাটি জুনিয়র স্কুলের অবৈতনিক সেক্রেটারি হিসেবে স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে ব্রতী হন। তারই হাত ধরে ১৯৬৭ সালে কড়িহাটি জুনিয়র স্কুল উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয় এবং তিনি এর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। ১৯৮৮ সালে তিনি একই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান।
কড়িহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি কড়িহাটি প্রাইমারি স্কুল, বিষ্ণুরামপুর প্রাইমারি স্কুল, সিংবাহুড়া প্রাইমারি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া তিনি প্রায় দুই দশক ধরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজির প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন নোয়াখালী জেলা শিক্ষক সমিতির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। চাটখিল উপজেলার ৮নং নোয়াখলা ইউনিয়নের অবকাঠামো উন্নয়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মরহুম আনোয়ারুল আজিম চাটখিল উপজেলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত। তিনি ও তার সহধর্মিণী মিসেস নাদেরা হায়দারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সিংবাহুড়া আপামর জনসাধারণের সমর্থনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সিংবাহুড়া গার্লস একাডেমি। আজকের এই স্মরণসভার প্রধান অতিথি নাদেরা হায়দার বিলাসী জীবনযাপনের সুযোগ বিসর্জন দিয়ে যেভাবে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এই একাডেমির নেতৃত্ব দিয়েছেন আজকের এই সভা তা কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করে।
ব্যক্তিগত জীবনে আজিম-নাদেরা দম্পতি তিন সন্তানের জনক জননী। তাদের প্রথম সন্তান ডক্টর আনোয়ারুল কবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের প্রফেসর, দ্বিতীয় পুত্র আনোয়ারুল জাবের পেশায় একজন ব্যাংকার ও কনিষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ আনোয়ারুল নাসের বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।
২৫ বছর আগে ২০০০ সালের ২৮শে মে তিনি নিজ বাস গৃহে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে রেখে যান স্ত্রী, তিন সন্তান, অগণিত শিক্ষার্থী ও ভক্ত অনুরাগী। স্মরণসভায় কৃতজ্ঞচিত্তে মরহুম আনোয়ারুল আজিম সাহেবের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
মন্তব্য করুন