কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মোকাররমপুর ভূমি অফিসের তহশিলদার শফিকুল ইসলাম শফির ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে গ্রাহকদের জিম্মি করা তার প্রধান কাজ বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ উঠেছে, অসুস্থতার বাহানা দিয়ে শফি নিয়মিত অফিসেও আসেন না, আসলেও দেরি করে আসেন। চড়েন রয়েল এনফিল্ডসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলে।
এদিকে সরেজমিনে কয়েকবার তার অফিসে গিয়ে একবার তহশিলদার শফিকুল ইসলামকে পাওয়া গেছে। তার সহকারী তহশিলদার নাজমুল জানান, অসুস্থ থাকায় নাকি আসতে পারেননি। তবে প্রতিবারই এ অফিসে গিয়ে টাকা লেনদেনের ভিডিওসহ বিভিন্ন ঘুষবাণিজ্যের তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া গেছে।
খাজনা দিতে আসা মাইমুনা খাতুন নামের একজন বলেন, কয়েক মাস ধরে ঘুরছি বাপ, শুধু পরে আসতে বলে। এতটুকু জমির খাজনার জন্য ১০ হাজার টাকা কীভাবে দেব?
স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী রমিজ হোসেন বলেন, পূর্বের আর বর্তমান তহশিলদারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। টাকা ছাড়া উনি কিছুই বোঝেন না। রয়েল এনফিল্ড, আরওয়ান ফাইভসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলে চড়ে উনি আসেন। সেবা চাইলেই পাশের কম্পিউটার চালককে দেখিয়ে দেন। তহশিল অফিসে আসা সেবাগ্রহীতারা খুব কষ্টে আছে।
খাজনা দিতে আসা আরেক ভুক্তভোগী সোহেল মাহমুদের দাবি, বিগত ৬ মাসে অন্তত ২৫ বার তিনি মোকাররমপুর ভূমি অফিসে এসেছেন তার জমির খাজনা দিতে। কিন্তু তহশিলদার শফিকুল ইসলাম তাকে কোনো সাহায্যই করেননি। উল্টো সহকারীর মাধ্যমে ২ হাজার টাকার খাজনার বিপরীতে চেয়েছেন ৭০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস, ভূমি কমিশনারের অফিস এমনকি দুদকের সাহায্য চেয়েও তিনি নিরাশ হন বলে অভিযোগ করেন। তাই বাধ্য হয়ে দলিল লেখক ইয়ারুলকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গত ৮ মে তহশিলদার শফিকুলের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকায় রফাদফা করেন।
সোহেল মাহমুদ বলেন, এক্ষেত্রে তহশিলদারের শর্ত ছিল, টাকা ৪০ হাজার নিবে কিন্তু জমির খাজনা রসিদ পূর্বের বাৎসরিক ২৪৪ টাকা হারেই হবে। ১৫ মে দলিল লেখক ইয়ারুলের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা শফিকুলকে দেওয়া হয়। কাজের মাঝপথে বিদ্যুৎ চলে গেলে শফিকুল খাজনার কাগজ শনিবারে দিতে চায়। কিন্তু আমি তাতে রাজি না হয়ে তহশিলদারের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেই।
দলিল লেখক ইয়ারুল ৪০ হাজার টাকা তহশিলদার শফিকুলকে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ১৫ মে আমার মাধ্যমেই সোহেল মাহমুদ শফিকুলকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তহশিলদার শনিবার খাজনার রসিদ দিতে চেয়েছিল। সোহেল মাহমুদ রাজি না হওয়ায় টাকা ফেরত নেয়।
সোহেল মাহমুদের স্ত্রী আলীয়া খাতুন বলেন, আমরা কোথাও থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। জমির খাজনা দিতে না পারায় বিক্রি করতে পারছি না। এজন্যই আমার মেয়ের বিয়ে আটকে আছে। আজ টাকা হাতে পেলেই কাল বিয়ে হবে। খুব দুর্দশার মধ্যে আছি।
আরেক ভুক্তভোগী মো. সাব্বির বলেন, আমাদের মোকাররমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর মোজার জমির খাজনা বাংলা ১৪২৮ সাল পর্যন্ত ২৪৪ ও ১৫৮ টাকা বাৎসরিক হারে পরিশোধ করেছি। আর খাজনা বাকি রয়েছে মাত্র ৩-৪ বছরের। কিন্তু তহশিলদার শফিকুল বলছে, পুরো জমির খাজনা দিতে হবে। ছয় মাস ধরে ঘুরছি। আমরা শুনেছি এটা আরএস রেকর্ডেই খাজনা দেওয়া যাবে। কিন্তু তিনি বলছেন অন্য কথা।
মোকাররমপুর ভূমি অফিসের তহশিলদার শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহেল মাহমুদ নামে আমি কাউকে চিনি না। পরবর্তীতে দলিল লেখক ইয়ারুলের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, এবার চিনতে পেরেছি। আমার টেবিলের উপরে রেখেছিল তবে সে টাকা আমি নেইনি।
এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সেবাগ্রহীতার ভোগান্তির বিষয় পুরোপুরি অস্বীকার করেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো আমার গাড়ি নয়, জামাইয়ের গাড়ি। শখ করে চড়েছি।
ভেড়ামারা সহকারী (ভূমি) কমিশনার আনোয়ার হোসাইনকে তহশিলদার শফিকুলের ৪০ হাজার টাকায় খাজনা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, আমার জানা মতে খাজনা দিতে কখনোই এত টাকা লাগে না।
আগের খাজনার রসিদ দেখে তিনি আরও বলেন, বাৎসরিক হিসেবে ২৪৪ টাকা লাগবে। তাছাড়া এ জমির খাজনা আরএস রেকর্ড অনুযায়ী দেওয়া যাবে। বাংলা ১৪২০ সাল, বিডিএস অনুযায়ীও যদি খাজনা দিতে হয়, তাও এত টাকা লাগবে না। ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে, অবশ্যই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন