যশোরের মনিরামপুরে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. বদরুজ্জামানের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা স্থগিতাদেশ সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে চিঠি পাঠিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
জানা যায়, ২০০৪ সালে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে (সমাজ বিজ্ঞান) নিয়োগ দেখানো হয় বদরুজ্জামানকে। কিন্তু নিয়োগের পর থেকে ২০ বছরে তিনি একদিনও স্কুলে যাননি। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও এডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা তাকে চেনেন না। ধর্মবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি ওয়াক্কাসসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে বদরুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ১ জুন ‘দৈনিক কালবেলায়’ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় বিধি মোতাবেক শিক্ষক বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার যশোরকে চিঠি পাঠানো হয়। সুপারিশপত্রটি পাঠান মনিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদরুজ্জামানের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে ৩ জুন দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য করে গঠিত কমিটি ১০ কর্ম দিবসের তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি অবগতির জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
একইদিন অপর স্মারকে উল্লেখ করা হয়, মো. বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করা যাবে না। এসব পত্রে স্বাক্ষর করেছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান।
অপরদিক, বুধবার (৪ জুন) বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে ওই গ্রামের জনৈক ফারুক হোসেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন বিজয়রামপুর স্কুলে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলেন। ২০০৪ সালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ইনছার আলীর স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ব্যাকডেটে বদরুজ্জামানকে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে যোগদান দেখিয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালে সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারীর স্বাক্ষরিত যে রেজ্যুলেশনে বদরুজ্জামানকে মূল প্যাটার্নে পদায়ন দেখানো হয়েছে সেই রেজ্যুলেশনের সব স্বাক্ষরও জাল। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ এসব কাজ করেছেন।
সরকারি নীতিমালায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে হলে বিএ পাস থাকা অবশ্যক। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম এইচএসসি পাস করে বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএড পাস ছাড়া আব্দুল হামিদকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মর্মে বলা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, ইতোমধ্যে বদরুজ্জামানের এমপিও স্থগিত হয়েছে। এ ব্যাপারে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্কুল খুললে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন