উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ১১:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাদাম চাষিদের সাফল্য-হতাশার গল্প তিস্তার চরজুড়ে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ক্ষেত থেকে বাদাম তুলছেন চাষিরা। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ক্ষেত থেকে বাদাম তুলছেন চাষিরা। ছবি : কালবেলা

তিস্তার বুকে ভেসে ওঠা অসংখ্য চর এখন সবুজ বাদামের গালিচায় ঢাকা। মাঠজুড়ে একের পর এক বাদাম ক্ষেত, আর সেই ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ কাঁধে ঝুঁড়ি বেঁধে বাদাম তুলছেন, কেউবা শুকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে এখনই বাদাম তোলার মৌসুম।

এই চরগুলোয় বসবাস করা হাজারও কৃষকের কাছে বাদাম চাষ যেন এক স্বপ্নের নাম। কেউ সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, কেউ আবার তিস্তার হঠাৎ রুদ্ররূপে চোখের সামনেই দেখেছেন সেই স্বপ্ন ভেসে যেতে।

চরের উঁচু এলাকায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। আলী আকবর নামের এক চাষি জানান, তিনি প্রায় ২ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। পরিশ্রম আর পরিকল্পনা মিলে এবার তার আশা ৭০ মণ বাদাম হবে, যা বিক্রি করে লাভ হতে পারে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

আলীর কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাস। তিনি বলেন, এ বছর যদি ভালো দাম পাই, তাহলে ঋণ শোধ করেও কিছু হাতে থাকবে। এই চরের মাটি যেন আবার আশার আলো দেখাচ্ছে।

অন্যদিকে, নিচু এলাকার চাষিদের চোখে-মুখে হতাশা। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত ডুবে গেছে পানিতে।

গোড়াইপিয়ার চরের কৃষক খোয়াজ মন্ডল দুঃখ করে বলেন, প্রায় দেড় একর জমিতে বাদাম করেছিলাম। কিন্তু পানি এসে সব শেষ। কিছু বাদাম উঠালাম বটে, কিন্তু অনেকটার ভেতর দানা-ই নেই। শুধু খোসা। খরচ উঠে আসবে কি না, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা।

তার হিসেবে, জমি থেকে বাদাম তোলা, ঘরে নেওয়া, সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। অথচ উৎপাদন দেখে মনে হচ্ছে, লোকসান হবে নিশ্চিত।

চরবাসীর জীবনের গল্প যেন নদীর মতোই- কখনও শান্ত আবার কখনও ভয়ংকর। যারা উঁচু জমিতে চাষ করেছেন, তারা খুশি। কিন্তু যাদের ক্ষেত নিচু, তাদের মুখে শুধু হতাশার গল্প।

চাষি বকুল মিয়া বলেন, তিস্তার পানি আমাদের জীবন। আবার এই পানিই কখনো কখনো আমাদের সর্বনাশ করে দেয়। তবু আমরা বাঁচি বাদাম ধরে, বাঁচি মাটির গন্ধে।

চাষিরা বলেন, যদি তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতো, তবে আর এভাবে প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না।

তিস্তাপারের এই চরগুলো শুধু বালু ও কাঁকর দিয়ে গড়া জমি নয়। এই জমিতে রয়েছে মানুষের স্বপ্ন, শ্রম আর সাহস। বাদাম চাষ যেমন তাদের হাসি এনে দেয়, তেমনি কখনও কখনও চোখের জলও। তবে চাষিরা এখনো স্বপ্ন দেখেন- তিস্তা একদিন শুধু ক্ষতির গল্প বলবে না, বলবে টিকে থাকার, ঘুরে দাঁড়ানোর আর নতুন করে শুরু করার গল্প।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এবার বাদামের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬০ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ৩৬৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩৮ টন। কিছু নিচু এলাকায় বাদাম নষ্ট হলেও উঁচু জমির ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়েতে মাইক বাজানোর শাস্তি বেত্রাঘাত!

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইল বস্তিবাসীর পাশে যুবদল নেতা

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা স্তূপে ধস

চবিতে ভুয়া শিক্ষার্থী আটক

ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নতুন সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন

জনগণের ভোটের আঘাতে সব ষড়যন্ত্র ধসে পড়বে : গয়েশ্বর

স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নির্ভরতায় সশস্ত্র বাহিনী

সিরামিক এক্সপো ২০২৫ প্রারম্ভে - ডিবিএল সিরামিকস সৌজন্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ

জেলে বসেই অনার্সে ফার্স্ট, ১২ বছর পর মাস্টার্সেও প্রথম স্থান—কে এই শিবির নেতা?

ভাতিজার লাথিতে প্রাণ গেল চাচার

১০

বহিষ্কৃত ৭৪ নেতাকে ‍নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত

১১

কর্মবিরতির ঘোষণা শিক্ষকদের / প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে অনিশ্চয়তা

১২

মা ও দুই শিশুর মরদেহ পৃথক স্থানে দাফন, মামলা হয়নি এখনো

১৩

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ধানের শীষের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে : সেলিমা রহমান

১৪

বিশ্বকাপ ড্র ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন আনল ফিফা

১৫

গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব ও এক পদ বাতিল করল ঢাবি

১৬

সাভারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল

১৭

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার

১৮

দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে অটোর ধাক্কা, স্কুলশিক্ষক নিহত

১৯

প্রতিটি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা 

২০
X