জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ফরিদপুর জেলা কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা। এ নিয়ে জেলাজুড়ে বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার আপন মামা গোলাম নাসির শ্রমিক লীগ নেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা মামলায় এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন।
এরই মাঝে গত ২৯ এপ্রিল এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয় মো. আব্দুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয় মো. রাকিব হোসেনকে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা- ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী থেকে দুজন করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দুজনের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা।
চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের টিমকে বলা হয়েছে, ওই টিমকে উল্লিখিত অঞ্চলের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রস্তাবনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর কিছুদিন একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। তার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় একজন ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। তবে ১০ বছর ধরে আমি আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করছি। ‘নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট’, রামপালবিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরোনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।
তিনি বলেন, সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাহলে আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা জানান, তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কীভাবে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়েছিলেন। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভালো হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলার এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক আশরাফ হোসেন বলেন, এনসিপির জন্ম ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে। শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন, এনসিপি পরিবারতন্ত্র বিবেচনা করে না। সৈয়দা নীলিমা দোলা তিনি ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি লড়াই সংগ্রাম করেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মাঠে ছিলেন, লড়াই সংগ্রামে ভূমিকা ছিল তার সন্তোষজনক। সে বিবেচনায় তার যোগ্যতায় সে জেলা সমন্বয়ক প্রধান হয়েছেন, এনসিপি কখনো পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তার পরিবার যাই থাকুক ওইটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, নীলিমা তার যোগ্যতায় উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে সৈয়দা নীলিমা দোলাকে প্রধান সমন্বয়কারী ও এসএম জাহিদ, সাইফ হাসান, জিল্লুর রহমান, বায়েজিদ হোসেন, কামাল হোসাইনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী ও সদস্য হিসেবে ১৭ জনসহ মোট ২৩ জনকে নিয়ে ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মেয়াদ থাকবে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্ব পর্যন্ত।
মন্তব্য করুন