পঞ্চগড়ের ঝকঝকে মোটা বালুর চাহিদা দেশজুড়ে। জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে খুঁড়লেই পাওয়া যায় মোটা বালু। বিভিন্ন নদ-নদী থেকেও পাওয়া উন্নতমানের এ বালু। সারা দেশে এ বালুর ব্যাপক চাহিদা। পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাক বালু দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন করা হয়।
জেলায় এতদিন বালু পরিবহনের জন্য একমাত্র বাহন ছিল ছোট-বড় ট্রাক। এখান থেকে নামমাত্র মূল্যে বালু কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে ভাড়াবাবদ অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো। এতে বালুর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পরে রেলপথে বালু পরিবহন শুরু হয়। স্বল্পখরচে বালু পরিবহনের সুযোগে অল্পদিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রেলপথ। জেলার বালু শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন হয়।
বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কপথে ট্রাকে বালু পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়। জেলা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনা বালু একটি ১০ চাকার ট্রাকে ঢাকা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও বগুড়া যেতে শুধু পরিবহন খরচবাবদ গুনতে হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। অনেক সময় ভাড়ায় ট্রাক না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। তবে রেলপথে একই পরিমাণ বালু পরিবহনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চগড় রেলস্টেশনের পাশেই রেলের বগিতে বালু লোড করা হচ্ছে। সম্প্রতি ৩০ বগি নিয়ে বালুভর্তি একটি ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়ে যায়। তবে যমুনা সেতু দিয়ে সরাসরি রেলপথে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত বালু পাঠাতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ট্রাকের তুলনায় পরিবহন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ খরচ কমবে বলে জানা তারা।
স্থানীয় বালু শ্রমিক এমদাদুল হক বলেন, আগে অটো চালাতাম। প্রতিদিন আয় হতো ৫০০ টাকার মতো। সংসার চলত না। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বালু উত্তোলন করি। এতে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়। পঞ্চগড়ে সারা বছর বালু উত্তোলন ও পরিবহন হয়ে থাকে। শুনলাম এখন নাকি ট্রেনে বালু জেলার বাইরে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো খবর।
উপজেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকায় বালু ব্যবসায়ী রানা বলেন, পঞ্চগড়ে উন্নতমানের বালু পাওয়ায় যায়। এ ছাড়া সরকারি অবকাঠামো এবং বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণে ২ দশমিক ৫ সাইজের বালুর চাহিদা দেওয়া হয়। সেই বালু আমাদের জেলায় পাওয়া যায়। ট্রাকে বালু পরিবহনে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় ট্রাকও পাওয়া যায় না। সড়কপথে দুর্ঘটনার একটা আশঙ্কা থাকে। ট্রেনে নিয়মিত বালু পরিবহন করা হলে অর্থ, সময়সহ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ট্রেনে বালু পরিবহন নিরাপদও। আমাদের ব্যবসায় নতুন দ্বার উন্মোচন বলা যায়।
পঞ্চগড় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, যাত্রীসেবার পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের জন্য মালবাহী ট্রেনের ওপরও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য এখান থেকে রেলপথে বালু পরিবহনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বালু পরিবহনের জন্য এখান থেকে একটি মালবাহী ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ট্রেনের চাহিদাও বেড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময় বালু পাঠাতে পারছেন। প্রয়োজন হলে ট্রেনে আরও নতুন বগি সংযুক্ত করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, নানা দিক থেকে প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড় সম্ভাবনাময়। জেলাটি খনিজ পাথর ও বালুসমৃদ্ধ। এ জেলার বিভিন্ন নদীর ইজারাকৃত বালুমহাল থেকে ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করেন। নদী থেকে বালু উত্তোলনের পর আবারও সেই নদী বালুতে ভরে যায়। এজন্য বছরজুড়েই চলে বালু উত্তোলন। এখান থেকে উন্নতমানের বালু বিভিন্ন জেলায় পরিবহন হয়। স্থানীয় অর্থনীতির বড় একটি অংশের জোগান আসে বালু পাথর থেকে। এ বালু নিয়মিত রেলপথে পরিবহন শুরু হলে এখানকার অর্থনীতিতে বড় একটা প্রভাব পড়বে।
মন্তব্য করুন