তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১১:০৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বইয়ের সঙ্গে গাছ উপহার, জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন মাহমুদুল

শিশু শিক্ষার্থীদের গাছ উপহার দিচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন। ছবি : কালবেলা
শিশু শিক্ষার্থীদের গাছ উপহার দিচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন। ছবি : কালবেলা

দেশের পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রমে ব্যতিক্রমী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি পর্যায়ে এবার ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার পরিবেশ ও শিক্ষাকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন।

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের মধ্যে গাছের চারা বিলি, বই উপহার, প্লাস্টিক ও পলিথিন কুড়িয়ে পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন এ তরুণ।

বুধবার (২৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ দিনেই দেশের পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রমে ব্যতিক্রমী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মাহমুদুল ইসলাম মামুনকে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২৪ দেওয়া হবে।

মাহমুদুল ইসলাম মামুন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন আজিজনগর গ্রামের আজহারুল-মাহমুদা দম্পতির ছেলে। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

জানা যায়, মাস্টার্স পাস করেও চাকরির পেছনে না ছুটে মামুন বেছে নিয়েছেন প্রকৃতি আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পথ। হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের আয় থেকে গাছের চারা ও বই কিনে সকাল থেকেই সাইকেলে করে ছুটে চলেন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। সঙ্গে থাকে পরিবেশ সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড, গাছের চারা ও বই। এ ছাড়া রাস্তার পাশে গর্ত দেখলে নিজের হাতে ভরাট করে দেন, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেন। বাজারে পড়ে থাকা পলিথিন, মাছ-মাংসের উচ্ছিষ্ট বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে রাখেন নির্ধারিত জায়গায়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাজ করে গেছেন পরিবেশ রক্ষায়।

সেই ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক গাছের চারা বিলি করেছেন মামুন। মহামারিকালেও ঘরে বসে থাকেননি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়েছেন ফলদ, ভেষজ ও ঔষধি গাছ, সঙ্গে সচেতনতার বার্তা। শুধু গাছ বিলি নয়, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে মামুন গড়ে তুলেছেন ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারও। একটি বই পড়া শেষ হলে আরেকটি দিয়ে বদলে দেন। বই পড়া শেষে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় গাছের চারা। শিশুরা যেন প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সে লক্ষ্যে খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করেন পাঠের আসর ‘আকাশতলা পাঠশালা’। যেখানে শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠরাও অংশ নেন।

এদিকে, নিজ গ্রামে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘প্রকৃতি পাঠাগার'। মাটির তৈরি তাক, গোল ছাউনি ঘরে গড়া এ পাঠাগারে প্রতিদিন ছুটে আসে বিভিন্ন বয়সী পাঠক।

মাহমুদুল ইসলাম মামুন বলেন, পরিবেশ নিয়েই বাঁচতে চাই, মরতেও চাই। গাছ নেই তো অক্সিজেন নেই। পরিবেশ না থাকলে আমরাও থাকব না। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানে নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাসা। সরকার আমাকে যে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তাতে আমি খুব কৃতজ্ঞ। এ পদক আমি আমার মাকে উৎসর্গ করছি। মা না থাকলে হয়তো এতটা পথ আসা হতো না।

মামুনের মা মাহমুদা বেগম বলেন, ছেলেটা ছোট থেকেই গাছ-প্রকৃতি ভালোবাসে। আজ সরকার তার কাজকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, এতে আমি একজন মা হিসেবে গর্বিত।

পরিবেশ অধিদপ্তর, পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, মামুন একজন প্রকৃত পরিবেশ বন্ধু। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেছি। অবশেষে তার কাজ স্বীকৃতি পেয়েছে, আমরা গর্বিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১০ লাখ টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

মেসিকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় মানেন রিয়ালের নতুন তারকা

জুলাই যোদ্ধাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : মাহমুদুর রহমান 

১৫ গাড়িচালকের প্লট বাতিল 

দখলে জিয়া খাল, জলাবদ্ধতায় ডুবছে কৃষিজমি

অপারেশন ছাড়াই গলবে পিত্তথলির পাথর, জেনে নিন ঘরোয়া ৮ টোটকা

ছাত্রদলের হল কমিটি বিদ্যমান থাকবে কি না, জানালেন রাকিব

চিটাগং কিংসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, ৪১ কোটি টাকা দাবি বিসিবির

নিজেদের ব্যর্থতা লুকাতে বারবার ভারতকে উসকানি দেয় পাকিস্তান

হজরত ওমরের পর সৎ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান : বুলু

১০

ভবন ভাঙার সময় ধস, চাপা পড়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

১১

ডাকসু নির্বাচন / তৃতীয় দিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ২২ জন

১২

বড় পরাজয়ে আসর শুরু বাংলাদেশের ‘এ’ দলের

১৩

জামিন পেলেন প্রিন্স মামুন

১৪

রাতে জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে ঝাঁপ কলেজ ছাত্রীর

১৫

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ জেলা, ৭২ ঘণ্টায় ১৫-২০ জেলায় বন্যার শঙ্কা 

১৬

মালয়েশিয়ায় যেসব সুবিধা পাবেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা

১৭

মুক্তির দিনেই পাইরেসির শিকার রজনীকান্তের ‘কুলি’

১৮

মুক্তির দিনেই পাইরেসির কবলে ‘ওয়ার-২’

১৯

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের চুক্তির মেয়াদ বাড়ল

২০
X