কুমিল্লা ব্যুরো ও মুরাদনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মুরাদনগরের ধর্ষণকাণ্ড : ফজর আলীর ছোট ভাইকে খুঁজছে পুলিশ 

অভিযুক্ত ফজর আলীর ছোট ভাই শাহ পরাণ। ছবি : সংগৃহীত
অভিযুক্ত ফজর আলীর ছোট ভাই শাহ পরাণ। ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ফজর আলীর ছোট ভাই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী শাহ পরাণকে (২২) খুঁজছে পুলিশ। ঘটনার দিন রাতে ফজর আলী ভুক্তভোগী ওই নারীর ঘরে ঢোকার পরপরই মোবাইলে সবাইকে ওই ঘরে ঢুকে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা দেন তিনি। ভুক্তভোগী পরিবারকে নিয়ে এই দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব বেশ আগেই প্রকাশ্যে আসে, যা নিয়ে সালিশও হয়েছে।

এদিকে ঘটনায় ৫ দিন চলে গেলেও পাশবিকতার শিকার কুমিল্লার মুরাদনগরের সেই ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। এতদিনেও ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় আলামত নষ্টের অভিযোগ উঠেছে।

ব্লাস্ট কুমিল্লার অ্যাডভোকেট শামীমা জাহান কালবেলাকে বলেন, পুলিশ তাকে বুঝিয়ে আলামত শরীরে থাকতেই ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারত। এখন তো আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমীন সুলতানা জানান, আইনেই বলা আছে ভিকটিম নারী যদি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে না চান তাহলে তা করা যাবে না। জোর করে ডাক্তারি পরীক্ষা আইনের বিধানে নেই।

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে চেষ্টা করেছি। তবে তিনি রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেছেন, তার স্বামী প্রবাস থেকে মোবাইলে ফোন করে এসবে যেতে নিষেধ করেছেন। এখন রাজি হলে করানো হবে।

তিনি জানান, ওই নারী হোমনা শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন। তিনি বাপের বাড়ি মুরাদনগরে বেড়াতে এসে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।

এদিকে পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেপ্তার ৪ জনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১নং আমলি আদালতে রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

ফজর আলীর ভাবি রাবেয়া কালবেলাকে জানান, ওই পরিবারের সঙ্গে ফজর আলী ও শাহ পরান দুই ভাইয়েরই টাকা লেনদেন নিয়ে সম্পর্ক তৈরি হয়। ফজর আলীর এলাকায় প্রভাব থাকায় ওই বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তারা তাকে ডেকে নিত।

তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন রাতে ফজর আলী আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিল। এমন সময় রাত ১০টার পর তার কাছে মোবাইলে কল আসে। তখন সে ফোন আসছে এক জায়গায় যেতে হবে বলে চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফজর আলীর সঙ্গে ওই পরিবারের সখ্য ভাই শাহ পরাণ মেনে নিতে পারেনি। এনিয়ে দুই ভাইয়ের মাঝে কথা-কাটাকাটি থেকে তুমুল ঝগড়া এবং এক পর্যায়ে শত্রুতা শুরু হয়। এছাড়া ফজরের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সুমনের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আবুলের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা চলছিল। শাহ পরান তার ভাই ফজরের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন ও তার ভাই ছাত্রলীগ নেতা সুমনের সঙ্গে হাত মেলায়। সুমন ঘটনার রাতে ওই ঘরে জোর করে অনুসারী এলাকাবাসী নিয়ে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। তাদের বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ঘটনার ৪ দিন পর সোমবার সকালে ছড়িয়ে পড়া দ্বিতীয় ভিডিওতে এ ঘটনা আরও স্পষ্ট হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল করিম জানান, ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে ফজর আলী ও তার ভাই শাহ পরাণের সঙ্গে পূর্ব থেকেই সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে শত্রুতা বেড়ে চরম আকার ধারণ করে। তাদের শত্রুতার এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসাও করা হয়। এরপরেও তাদের বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন জানান, ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘদিন ধরে প্রেম-পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদের হাতেনাতে আটক করে।

তিনি জানান, প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে শাসানো ও নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর সেই ভিডিও পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মতো একই কথা বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিমও। অবশ্য তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার কঠিন বিচার দাবি করেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, প্রিজনসেলে চিকিৎসাধীন ফজর আলীর হাড় ভাঙা ও জখম রয়েছে। দুটো অস্ত্রোপচার লাগবে। পুরোপুরি সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।

এদিকে দ্বিতীয় ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ পর্নোগ্রাফি আইনে রমজান, অনিক, আরিফসহ আরও বেশ কয়েকজনকে খুঁজছে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পর্নোগ্রাফি আইনে আরও কয়েকজন চিহ্নিত হয়েছে। তারা সবাই এলাকা ছেড়েছে। পুলিশ ও ডিবির বেশ কয়টি টিম কাজ করছে। শাহ পরাণসহ সব আসামি ধরতে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১০

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১১

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১২

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৩

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৪

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৫

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৬

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১৭

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

১৮

তারা ভেবেছে, নারীঘটিত বিষয় নিয়ে প্রচারে আমার ভোট কমে যাবে : আমির হামজা

১৯

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপিকে চরমোনাই পীরের কড়া বার্তা

২০
X