সিলেটে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্য বিকল হয়ে গেছে সিলেটের কুমারগাঁওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন। ফলে লোডশেডিংয়ে পরিমাণ আরও বেড়েছে। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজারে গড়ে ৫-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। নগরীর বাইরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া সিলেটের কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ স্টেশন চালু হলে নগরীতে তেমন লোডশেডিং হবে না।
উপশহর বি ব্লকের বাসিন্দা আক্তার হোসেন কালবেলাকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। সন্ধ্যার পর যখন বাচ্চারা পড়তে বসবে তখনই লোডশেডিং শুরু হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। অনেক সময় মধ্যরাতেও কারেন্ট চলে যায়।
পাঠানটুলার গৃহিণী নাসরিন জাহান বলেন, দিনের পর সন্ধ্যায় বাসায় অনেক কাজ থাকে। ঠিক কাজ করার সময়টাতে কারেন্ট থাকে না। প্রতিদিন একই অবস্থা, এটা দেখার যেন কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে কুমারগাঁওয়ের এই পাওয়ার স্টেশন বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। কবে এই পাওয়ার স্টেশন চালু হবে এর সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। তিনি জানান, কবে চালু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারব না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীতে পাঁচটি ডিভিশনে ১৩টি সাবস্টেশন রয়েছে। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ওপর কুমারগাঁওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ। এর পর থেকেই সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং ভোল্টেজও কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না সিলেটে।
এদিকে সিলেটে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ মানুষ। ভুক্তভোগীরা গত এক সপ্তাহে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বন্ধ হলে বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে কল দিয়ে প্রকৌশলীদের গালিগালাজ দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন কালবেলাকে বলেন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় আমাদের কিছু কিছু এলাকায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হয়। এখন জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে। কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশন যখন চালু ছিল তখন আমরা সরাসরি বিদ্যুৎ পেয়ে যেতাম এখন জাতীয় গ্রিড থেকে নিতে হয়। এখন প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ জন্য সিলেটের গ্রাহকরা ভোগান্তিতে আছেন। কুমারগাঁও স্টেশন চালু হলে লোডশেডিং কম হবে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির কালবেলাকে বলেন, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। এই কুমারগাঁওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১০ দিন। এটা বন্ধ থাকার কারণে ভোল্টেজও কম হচ্ছে। সিলেটের লোডশেডিংও বেড়ে গেছে। আমরা এখন গ্রিড থেকে পাওয়ার আনছি। কুমারগাঁও স্টেশন চালু হলে সিলেটের লোডশেডিং কমবে। লো ভোল্টেজের সমস্যাও সমাধান হবে। ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে, তাই বলা যাচ্ছে না কত দিনের ভেতর ঠিক হবে। কারণ এটার যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনা হয়। তা ছাড়া সিলেট চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি)।
মন্তব্য করুন