পদ্মার ভাঙন শুধু ঘরবাড়ি নয়, এবার নদীতে দ্বিতল আলম খাঁর কান্দি জামে মসজিদ। চোখের পলকে এই মসজিদটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকায় এ ভাঙন দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ হাসান বলেন, ‘সকালেই খবর পাই মসজিদের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দে মসজিদটি ধসে পড়ে পদ্মায়। আমরা হতবাক। শুধু একটা মসজিদ ভাঙেনি, আমাদের আশা-ভরসাও যেন ভেঙে পড়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, এ মসজিদ ছিল এলাকার ধর্মীয় ও সামাজিক মিলনের অন্যতম কেন্দ্র। নামাজ, মক্তব, ইসলামী আলোচনা—সবই হতো এখানে। এখন সেটি শুধুই স্মৃতি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন রক্ষাবাঁধ এলাকায় ভাঙন শুরু হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। পরে একাধিক দফায় ভাঙনে অন্তত ৭৫০ মিটার রক্ষা বাঁধ নদীতে বিলীন হয়। এতে মসজিদ ছাড়াও আশপাশের ৫০টি ঘরবাড়ি, ৩০টির বেশি দোকান ও মাঝিরঘাট এলাকার বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কে শতাধিক পরিবার অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে তাদের বসতি। বর্তমানে প্রায় ৬০০ পরিবার ও ২০০টিরও বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধে আপৎকালীনভাবে ১ লাখ ২০ হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। ৫ কোটি টাকা ব্যয় করেও ভাঙন আরও ১৫০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
মাঝিরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, জিওব্যাগে কাজ হচ্ছে না। মসজিদটাই চলে গেলো চোখের সামনে। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে?
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, আমরা আপৎকালীন ব্যবস্থা নিচ্ছি; কিন্তু স্রোতের তীব্রতায় ভাঙন থামানো যাচ্ছে না। স্থায়ী টেকসই প্রতিরক্ষা ছাড়া সমাধান নেই। এরই মধ্যে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। শুধু একটি মসজিদ নয়, এলাকাবাসীর আস্থা ও অনুভূতির জায়গাটিও হারিয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি, স্থানীয়ভাবে সহায়তা চলছে। পাশাপাশি বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা তৎপর।
মন্তব্য করুন