আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মধুমতীর ভাঙনে হুমকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-বসতবাড়ি, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

তীব্র ভাঙনের মুখে নদীর পাড়। ছবি : কালবেলা
তীব্র ভাঙনের মুখে নদীর পাড়। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প, বসতবাড়ি ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। বিশেষ করে গোপালপুর, টগরবন্দ, পাচুড়িয়া, বানা ও বুড়াইচ ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে নদীতে বিলীন হচ্ছে জনপদ।

২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন হলেও কাজের ধীরগতির কারণে প্রকল্প এলাকার ভেতরেই এবং নতুন করে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা, বানা ইউনিয়ন ও বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া, টগরবন্দের শিকারপুর ও টিটা-পানাইল গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

গোপালপুর ইউনিয়নের স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলো এখন নদীভাঙনের হুমকিতে। দিগনগর পয়েন্টে আল হেরা দাখিল মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর বাজার, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি এখন নিত্যদিনের।

গত ৩০ জুলাই টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর ও টিটা-পানাইল এলাকার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল। পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম রায়হানুর রহমান, উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ফরিদপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার।

এলাকাবাসী জানায়, এরই মধ্যে ইকড়াইল গ্রামের একটি মসজিদ নদীতে হারিয়ে গেছে। ইকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন নদীর মাত্র ২০ গজ দূরে। যে কোনো মুহূর্তে সেটি তলিয়ে যেতে পারে। ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে বাঁধ নির্মাণের কথা, সেখানেই আজ ভাঙন। কাজের গতি নেই, নজরদারি নেই। আমরা ঘরবাড়ি, স্কুল, ফসলি জমি—সব হারিয়ে ফেলছি।

তারা আরও জানান, পাঁচ গ্রামের ১০টি জামে মসজিদ, একটি কলেজ, দুটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুটি বড় হাট, ১০টি মাছ ও গবাদি পশুর খামার, কয়েকটি কাঁচা সড়ক, ঈদগাহ, কবরস্থানসহ শত শত একর ফসলি জমি, গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে।

টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২৬ মে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর স্থায়ীবাধ নির্মাণের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এবার যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, তা ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। অর্ধশত মানুষ এরই মধ্যে বসতঘর হারিয়েছেন। শত শত একর আবাদি জমি গেছে নদীতে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলন, নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা চাই পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আগেই স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ হোক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার বলেন, এ এলাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত নদীভাঙনের এলাকায় পরিদর্শন করবেন তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রেলপথ অবরোধে আটকা ৮টি ট্রেন, ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়

পাকিস্তান সীমান্তে দুপক্ষের গোলাগুলি, ভারতীয় সেনা নিহত

জেসিকাকে ওরকার খেয়ে ফেলার দাবি ভুয়া, ভিডিওটি এআই নির্মিত

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

আটক ৫ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

অবশেষে প্রকাশ্যে এলো ‘দেবী চৌধুরানী’র টিজার

আড়তে মেলে ইলিশ, পাতে ওঠে না সবার

নির্বাচনের সময় উপদেষ্টা থাকবেন না আসিফ মাহমুদ

বাস-ট্রাকের ভয়াবহ সংঘর্ষ

শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনে, যান চলাচল বন্ধ

১০

নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার এবার খেলবেন স্কটল্যান্ডের হয়ে

১১

কিশোরগঞ্জে ২ কলেজের নাম পরিবর্তন

১২

কেনিয়ার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতিতে শায়খ আহমাদুল্লাহর হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস

১৩

বিব্রতকর এক রেকর্ড নিজের করে নিলেন রশিদ

১৪

সিলেটের পাথর উদ্ধারে এবার অভিযানে নামছে দুদক

১৫

দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার দায়ে আসামির ১০ বছরের কারাদণ্ড

১৬

ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দিলেন মির্জা ফখরুল

১৭

৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

১৮

দেশের ওষুধ শিল্পে সংকট-ঝুঁকি নিয়ে মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ

১৯

পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় জয়ে যেসব রেকর্ড গড়ল ক্যারিবীয়রা

২০
X