আজও কান্না থামেনি জুলাই শহীদ রাফিদ হোসেন রুশোর মা-বাবার। গত বছর ৫ আগস্ট শহীদ হন তিনি। তখন থেকে কেঁদেই দিন-রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন মা-বাবা। চোখের জল যেন শুকাচ্ছেই না তাদের। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে নব্বই ছুঁই ছুঁই দাদা মোখলেছুর রহমানও বাকরুদ্ধ। নাতির ছবির দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।
রুশোর গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই গ্রামে। বাবা বিজিবির হাবিলদার জিয়াউর রহমান। মা রশিদা বেগম একজন গৃহিণী। বাবার চাকরির সুবাদে রাদিফ হোসেন রুশো লালমনিরহাট সদরে পড়ালেখা করে বেড়ে উঠেছেন। লালমনিরহাট সদরের খুটামারা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন রুশো।
গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন খানের বাসভবন ভাঙচুরে করে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্র-জনতা। ওই বাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ যে ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয় তার মধ্যে একজন রাদিফ হোসেন রুশো। অন্যরা হলেন- রাজিব, জনি, জোবায়ের, শাহরিয়ার তন্ময় ও শ্রাবণ। তারা সবাই ছাত্র।
ছেলে হারিয়ে বাবা জিয়াউর রহমান ১২ বছর চাকরির মেয়াদ থাকার পরও অবসর নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ফুলবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। এখন ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আফসোস আর আহাজারিতে দিন যায় তাদের।
রুশোর মা রশিদা বেগম বলেন, রাফিদ হোসেন রুশোই আমাদের একমাত্র ছেলে। তাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। রুশো ব্যারিস্টার হবার স্বপ্ন দেখত। সেটা আর হলো না। এখনো মনে হয়, রুশো- মা মা বলে ডাকছে।
বাবা জিয়াউর রহমান জানান, তিনি যখন চাকরিতে ছিলেন তখন কতবার যে ফোন দিত! সোনার ছেলে ছিল রুশো। গত বছরের ৫ আগস্ট সোমবার রুশো সকাল থেকে অনেকবার ফোন দিয়েছিল। বিকেলে একবার ফোন দিয়ে বললো, বাবা আমি লালমনিরহাট জেলা পরিষদ থেকে বৈষম্যবিরোধী আনন্দ মিছিলে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করিও। সে কথাই ছিল শেষ কথা।
মন্তব্য করুন