গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, চুনোপুঁটিদের নয়, খুনি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান কামাল ও শামীম ওসমানদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। এ নিয়ে জাতি কোনো টালবাহানা সহ্য করতে না। প্রয়োজন হলে আরও ১০টি ট্রাইব্যুনাল বসাতে হবে। টাকা না থাকলে জনগণ টাকা দিবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ঝিনাইদহ শহরে একটি রেস্টুরেন্টে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং একটি সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
রাশেদ খান বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের বিলোপ হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগীরা এখন টাকার বিনিময়ে এ সরকারের সুবিধা ভোগ করছেন। এটা গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থি। আর ফ্যাসিবাদ আমলাদের প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে সরকার এক বছরেও দৃশ্যমান কোনো সংস্কার বা সফলতা দেখাতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, চলমান সংস্কার, খুনিদের বিচার ও দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ড. ইউনূস সরকার হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদ বিলোপ হবে না।
এনসিপির সমালোচনা করে গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা বলেন, এ দলটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এটা আমার কথা নয়, টিআইবি প্রধান তাদের কিংস পার্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া এনসিপি সমর্থিত দুই উপদেষ্টা পদ নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। তারপরও হাসনাত আব্দুল্লাহ ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদেরও ভুল ভাঙতে বসেছে।
রাশেদ খান বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে থাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ড. ইউনূস সরকার কোনো সংস্কার করতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্ররা এখন পড়ার টেবিলে নেই। তারা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। কারণ আন্দোলন করে তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নয়, পলিটিশিয়ান হতে চান। পলিটিশিয়ানে এখন অনেক টাকা। ছাত্রদের উপদেষ্টার পদ দিয়ে এ সরকার ছাত্র নেতৃত্ব নষ্ট করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, যারা হাসিনার মতো স্বৈরশাসককে পরাজিত করতে পেরেছে, তারা আজ নানা কলঙ্কের তিলক মাথায় নিচ্ছে। চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছেন। মানুষ ও সমাজের কাছে এসব বীরের হেয় হচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রদের কলঙ্কিত করল কারা?
রাশেদ বলেন, প্রত্যেক উপদেষ্টা দুর্নীতি করছেন। তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। ডিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই দুর্নীতির ছোঁয়া লেগে আছে। ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াতের তকমা লাগানো আমলারা এখনো নির্যাতিত ও পদ বঞ্চিত হচ্ছেন।
জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ নেতা বলেন, যে সরকার শহীদদের তালিতা তৈরি করতে পারে না, তাদের কাছ থেকে জাতি কি আশা করতে পারে। জাতিসংঘের তদন্তে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ কিন্তু জুলাই সনদে সংখ্যা এক হাজার করা হলো। এটা কেন এবং কীভাবে হলো?
গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে মাঠে থাকা ও এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মো. রাশেদ খান বলেন, মাঠে না থাকলে আওয়ামী লীগ মাঠ দখল করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে তারা এমন ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। তাই সবাই কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি নানা ছুতোয় নির্বাচন করতে চাইবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। কারণ তারাও হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগী। ডামি, মামি বা যে কোনো নামে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তিনি ১৪, ১৯ ও ২৪ সালে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের বিচার করতে হবে।
ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, যুব অধিকারের সভাপতি রাকিবুল হাসান রকিব, যুবনেতা মো. মিশন আলী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হান হোসেন রিহান, মো. মাহাফুজ রহমান, মো. হালিম পারভেজ ও মো. নাহিদ হাসনান।
মন্তব্য করুন