ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী হয়রানিসহ অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন- দৈনিক যুগান্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টাফ রিপোর্টার ও আখাউড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি এবং আরটিভির আখাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি ও আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগ এনে ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট আরটিভি অনলাইন এবং ৭ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য, যাত্রী হয়রানিসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কে ঘুষ নেওয়া হয়। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইমিগ্রেশনে ঘুষ আদায় করছে মর্মে সংবাদে দাবি করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন পুলিশের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, মামলার বিবরণে এসব সংবাদকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেন ইমিগ্রেশন ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সাত্তার।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. ফজলে রাব্বি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব থেকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছি। এ মামলা হয়রানিমূলক এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা।
সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সাংবাদিকের কাজ সত্য প্রকাশ করা। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। সঠিক তদন্ত হলে ইমিগ্রেশন পুলিশের দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আখাউড়া থানার ওসি ছমিউদ্দিন তদন্ত ছাড়াই মামলাটি রুজু করে প্রমাণ করেছেন তিনি নিরপেক্ষ নন। এটি সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত।
আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুবেল আহমেদ বলেন, এটি সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি সাংবাদিকরা যেন নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আখাউড়া সাংবাদিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ করলেই যদি মামলা হয়, তাহলে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। অবিলম্বে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সাংবাদিকরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদেরকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা হলে ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রতিবাদ দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি।
আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। চাঁদাবাজির পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে মানহানির অভিযোগও আনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন