রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় সচেতন মহল দাবি করে বলেছেন, ‘যখন স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল, ঠিক তখন পরিবেশ আন্দোলনকর্মীর পরিচয়ে রবীন্দ্রবিরোধী একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে চলনবিল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছে চক্রটি।’
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) প্রস্তাবিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণ ও দ্রুত ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে পৃথক তিনটি সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেছেন।
শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-৩-এর অডিটোরয়িামে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রস্তাবিত স্থানের সঙ্গে চলনবিলের কোনো সম্পর্ক নেই। এখান থেকে চলনবিলের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। মাঝখানে গ্রাম, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ নানা অবকাঠামো রয়েছে।
চলনবিল রক্ষ করতে চাইলে বাঁধ নিয়ে কথা বলুন, স্লুইসগেট নিয়ে কথা বলুন, ভূমি দখল নিয়ে কথা বলুন, অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে কথা বলুন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতিকে আশ্রয় করে মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক মিতালি রক্ষা করে তৈরি হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী নয়, তারা রবীন্দ্রবিরোধী, উচ্চশিক্ষাবিরোধী এবং দেশবিরোধী।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জান্নাতুল মাওয়া মুন, সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ইয়াতসিংহ শুভ, সহকারী অধ্যাপক দেবশ্রী দোলন, প্রোগ্রামার মানিক আহমেদ ও কম্পিউটার অপারেটর সজীব উপস্থিত ছিলেন।
একই স্থানে বেলা সাড়ে ১১টায় বহল বাড়ি ও বুড়ি পোতাজিয়া গ্রামবাসীর পক্ষে সচেতন নাগরিক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গ্রামবাসীর পক্ষে ডা. আব্দুল হান্নান বলেন, বুড়ি পোতাজিয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত ক্যাম্পাস প্রকল্প এলাকা দিয়ে চলনবিলের পানি প্রবাহিত হয় না। চলনবিলের পানি অন্য দিক দিয়ে যায়। তাহলে চলনবিলের ক্ষতি হবে কী করে? যারা বালুর ব্যবসা, গোচারণ ভূমি ইজারার নামে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তারাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছেন।
এ সময় সমাজসেবক মোহাম্মদ আলী, জাকির মাস্টার, মারুফুল ইসলাম ও ফার্মাসিস্ট শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাকারিয়া জিহাদ, মিজানুর রহমান মিলন, মেরাজ ও হাসান। তারা বলেন, পরিবেশ আন্দোলনকর্মীর পরিচয়ে একটি লোভী, স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে চলনবিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালাতে শুরু করে। অথচ গত ৯ বছরে এ বিষয়ে তারা একটিও কথা বলেনি। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করুন। লোভে পড়ে শত শত শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলবেন না। এ প্রতিষ্ঠানের আলোয় আপনার পরিবার ও সমাজও আলোকিত হবে।
পৃথক সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা আজ শনিবার প্রতীকী অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে আগামীকাল রোববার একনেক বৈঠকে ডিপিপি অনুমোদন না হলে সচিবালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
মন্তব্য করুন