চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুরুতর আহত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ চার দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই রক্তক্ষরণ বন্ধে অপারেশনের প্রয়োজন। পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিলে রাতেই অপারেশন করা হতে পারে।
বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে পার্কভিউ হাসপাতালে নিউরো সার্জন, নিউরো মেডিসিন ও মেডিসিনের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়।
রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমতিয়াজ মাথায় গুরুতর জখম পান। রাতেই অস্ত্রোপচারের পর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেডিকেল বোর্ড সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরইমধ্যে সিটি স্ক্যান করে রিপোর্ট বোর্ডের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক প্রবীর বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, তার কনশাস লেভেল বা চেতনার মান এখন ৮-৯ এর মধ্যে রয়েছে। স্বাভাবিক মানুষের মাত্রা হয় ১৫। ১০ এর ওপরে না ওঠা পর্যন্ত তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। তার মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে একটা সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুপুরে আরেকটি সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।
এদিকে একই সংঘর্ষে আহত সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ কালবেলাকে বলেন, তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। ইমতিয়াজের সিটি স্ক্যানে মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেখা গেছে। এটি বন্ধে একটা অপারেশনের প্রয়োজন। পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিলে আজ রাতেই অপারেশন করা হবে।
ইমতিয়াজের বাবা–মা ছেলের চিকিৎসার জন্য সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালেই বগুড়া থেকে চট্টগ্রামে আসেন। ছেলের সুস্থতার অপেক্ষায় তারা হাসপাতালের আইসিইউর বাইরে দিন কাটাচ্ছেন। আর বড় ভাই আসাদুজ্জামান সজিব এসেছেন রোববার রাতেই।
বুধবার বিকেলে পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউর সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, সংঘর্ষের দিন দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটে তার আহত হওয়ার খবর পাই।ভাইয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই। রাতেই হাসাপাতালে এসে পৌঁছাই।
তিনি বলেন, আমার সহজ সরল ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। সে কোনো রাজনীতি ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তার হাতে লাঠিসোটা ছিল না। শিক্ষকের ওপর হামলা হচ্ছে দেখেই সে ছুটে গেছে। এতেই তার এ অবস্থা।
তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা চাই, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে এমন কিছু করতে আর সাহস না করে।
চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে বলেছে। আমরা তাদের থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছি। তারা যেন এটা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত রাখে।
সংঘর্ষ বড় হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেরও কিছুটা গাফলতি ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে আসতে পারত, তাহলে এত বড় ঘটনা থামানো যেত।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর ফটক এলাকায় এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সোয়া ১২টা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ঘটনার তিনদিন পর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহিম বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মন্তব্য করুন