বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক মুঠো চালের আশায় ক্লান্ত মানুষের রাতভর অপেক্ষা

এক মুঠো চালের আশায় লাইনে থেকে রাতভর অপেক্ষা ক্লান্ত মানুষের। ছবি : কালবেলা
এক মুঠো চালের আশায় লাইনে থেকে রাতভর অপেক্ষা ক্লান্ত মানুষের। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর রাতগুলো এখন আর নিছক ঘুমানোর সময় নয়। এখানে রাত মানে অপেক্ষা। ভোর মানে অনিশ্চয়তা। শহরের অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আজ ঘুরপাক খাচ্ছে এক মুঠো চালের আশায়।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, সবজিই যেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পরিবারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাওয়া এসব মানুষ এখন ঠেকেছেন সরকারের সাশ্রয়ী মূল্যের ওএমএস চালের লাইনে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে চৌদ্দপাই ফায়ার সার্ভিস মোড়ের দৃশ্য যেন এক অনন্ত কষ্টের আখ্যান। রাত তখন দেড়টা। কিন্তু রাস্তার পাশে দীর্ঘ লাইন। নারী, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ, শিশু কোলে মায়েরা— সবাই দাঁড়িয়ে আছেন।

কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বইছে, রাত ঘন হচ্ছে। তবুও কারও চোখে ঘুম নেই। চোখে শুধু প্রতীক্ষা। রাত যত গড়ায়, লাইনের দৈর্ঘ্য ততই বাড়ে। ভোর হওয়ার আগেই শত শত মানুষ জড়ো হন। তাদের একটাই আশা— সামান্য চাল নিয়ে ঘরে ফেরা।

কিন্তু সেই আশা সবার পূরণ হয় না। বরাদ্দ সীমিত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও অনেকেই খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হন। কারও মুখে কান্না, কারও চোখে রাগ, আবার কারও নিঃশ্বাসে গভীর হাহাকার।

মহোনপুরের মোসলেমা বেগম রাতভর দাঁড়িয়ে থেকেও চাল না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েন। কণ্ঠ কাঁপতে কাঁপতে বলেন, ‘সারা রাত দাঁড়ালাম, কিছুই পেলাম না। যদি খালি হাতে ফিরি, তবে সন্তানদের মুখে কী দেব?’

রিকশাচালক শহিদুল ইসলামের কথায় ফুটে ওঠে দৈনন্দিন সংগ্রাম। তিনি বলেন, ‘দিনে যত আয় করি, তাতে বাজার থেকে চাল কেনা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই লাইনে আসি। কিন্তু অনেক দিন খালি হাতেই ফিরতে হয়।’

মরজিনা বেগমের ক্ষোভও যেন সবার বেদনার প্রতিচ্ছবি। ‘এত রাতে আসি, ভোর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু দুপুরে ফিরে যেতে হয় খালি হাতে। টাকাও আছে, তবুও খাবার কিনতে পারি না। এটা খুবই কষ্টের।’

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেখা গেল, চাল বিতরণ শেষ পর্যায়ে। তবুও লাইন ভর্তি মানুষ। কারও হাতে সামান্য চালের ব্যাগ, কারও চোখে হতাশার অশ্রু। প্রতিদিনই একই দৃশ্য। যেন এক সিনেমার পুনরাবৃত্তি।

এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার লেখা। যদিও রাজশাহী জেলার উপ-খাদ্যনিয়ন্ত্রক রিপর আলী কালবেলাকে বললেন, নিয়ম মেনেই সব চলছে। প্রতিদিন ৩০টি ওয়ার্ডে এক টন করে চাল ও আটা বিতরণ করা হয়। মানুষের ভিড় এত বেশি যে সবাই পান না। আশা করি, বরাদ্দ বাড়লেই পরিস্থিতি বদলাবে।

কিন্তু বরাদ্দ বাড়ার আগ পর্যন্ত রাজশাহীর রাতগুলো কেবল দীর্ঘশ্বাস বয়ে আনছে। এখানে প্রতিটি রাত যেন মায়ের চোখে সন্তানকে খাওয়ানোর অশ্রু, শ্রমিকের ক্লান্ত শরীরে ভাতের আকুতি। শহরের বাতাসে ভেসে বেড়ায় একটাই প্রশ্ন— আজ ক’জনের ভাগ্যে জুটবে এক মুঠো চাল, আর ক’জন ফিরবে খালি হাতে?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী : আনোয়ারুজ্জামান

বিভিন্ন মন্দিরে শিশুদের মাঝে চকলেট বিতরণ

আ.লীগকে অচিরেই আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হবে : জুয়েল

কাজে আসছে না ১১ কোটি টাকার পানি শোধনাগার

পূজার ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হিন্দুরা ভারত যাবে না : ফখরুল ইসলাম

মন্দির পরিদর্শন করলেন ছাত্রদল নেতা ডা. জনি

সংখ্যালঘু বলতে এদেশে কিছু নেই, আমরা সবাই বাংলাদেশি : মান্নান

স্বেচ্ছাসেবা বদলে দিতে পারে জনপদ ও জনজীবন দৃশ্যপট

নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ

১০

এক মুঠো চালের আশায় ক্লান্ত মানুষের রাতভর অপেক্ষা

১১

শারদীয় দুর্গা উৎসবে রাজশাহী মহানগরীতে ছাত্রদলের হেল্প ডেস্ক

১২

চট্টগ্রামে শুরু হলো ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস

১৩

নাটোরে মন্দির পরিদর্শন করলেন ভারতের সহকারী হাইকমিশনার

১৪

রংপুরে আরও দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত

১৫

সাবেক এমপির বাড়িতে ফের আগুন ও লুটপাট

১৬

মির্জাপুরে ৩ উপদেষ্টার পূজামণ্ডপ ও কুমুদিনী কমপ্লেক্স পরিদর্শন

১৭

শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মারধর, এলাকাবাসী বলছে বেত্রাঘাতের ক্ষোভ

১৮

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পদ হারালেন বিএনপি নেতা

১৯

পূজায় পুলিশের গুলি চুরি, ৩ আসামি রিমান্ডে 

২০
X