নারায়ণগঞ্জে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পাঁচ দিনব্যাপী এই আনন্দোৎসব, যা এবারে রূপ নিয়েছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য মহোৎসবে।
পুরো উৎসবজুড়ে আলোচনায় ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। পূজার প্রস্তুতির শুরু থেকেই তিনি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে সনাতন ভক্তদের মনে স্থান করে নিয়েছেন।
পূজার প্রথম দিনেই জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজামণ্ডপে গিয়ে তিনি চমকে দেন ভক্তদের। জেলার সীমান্তবর্তী এই দুর্গম এলাকায় সচরাচর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যান না। পরদিন সপ্তমীতে তিনি উপস্থিত হন বন্দরের চর শ্রীরামপুর এলাকার শ্রীশ্রী ব্রহ্মা মন্দিরে, যা পাকিস্তান আমলে নির্মিত হলেও এর আগে কোনো জেলা প্রশাসক সেখানে যাননি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, জেলা প্রশাসক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন, আমাদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার সবচেয়ে নিখুঁত বাস্তবায়ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। তার দরজা সবার জন্য খোলা— ধনী-গরিব, মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে।
নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, ওনার ভূমিকা ও আন্তরিকতা বিশ্লেষণের ঊর্ধ্বে। উৎসবমুখরভাবে দুর্গাপূজা পালনে ওনার প্রচেষ্টা ছিল নজিরবিহীন। এমন জেলা প্রশাসক পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সভাপতি শংকর দে জানান, প্রতিমা বিসর্জনের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নতুনভাবে ৫ নম্বর ঘাটে আড়াইশ ফুট লম্বা জেটি তৈরি করা হয়। সেখানে ৪৩টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এমন সহযোগিতা আগে দেখা যায়নি।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় ছিল এক উৎসবমুখর পরিবেশ। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা। ফলে এ বছরের দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়— হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য করুন