সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরগুনা তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক ও ছাত্রলীগ নেতা মো. আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা জলিল ফকির সাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
আবুল কাসেম রিঙ্কু উপজেলা ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদক। ২০২১ সালে সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসে মাঠ সহায়ক পদে চাকরি নেন। তার বাবা জলিল ফকির তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক।
জানা গেছে, আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবা জলিল ফকিরের দুটি ট্রলার অবরোধের আগের দিন শুক্রবার রাতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশ শিকারে সাগরে যায়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ওই ট্রলার দুটি সাগরে ইলিশ শিকার করে।
জেলেদের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা জলিল ফকির ও তার ছেলে মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা মাঠ সহায়ক রিঙ্কু সাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেছেন। রোববার গভীর রাতে ইলিশ মাছ নিয়ে ওই ট্রলার দুটি ফকিরহাট ঘাটে আসে। পরে ট্রলারের লোকজন ইলিশ মাছ ড্রামে ভরে রিঙ্কুর মৎস্য আড়তে রাখেন।
স্থানীয় জেলে আমির হোসেন ও রুবেল মাঠ সহায়ক রিঙ্কুর আড়তে বস্তায় ভরে রাখা মাছ আটক করে। কিন্তু রাতেই ওই আড়ত থেকে ম্যানেজার আল আমিন, জলিল ফকির ও রিঙ্কু মাছ সরিয়ে ফেলেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেরা ওই আড়তে এসে জড়ো হয়।
জেলে আমির হোসেন ও রুবেল বলেন, ট্রলারের শব্দ পেয়ে মৎস্য ঘাটে এসে দেখি রিঙ্কু ও তার বাবা আব্দুল জলিল ফকিরের দুটি ট্রলারে অনেক ইলিশ মাছ। ট্রলারের জেলেরা ওই মাছ বস্তা ও ড্রামে ভরে রিঙ্কুর আড়তে নেয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মাছ তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
তারা আরও বলেন, অবরোধের দিন সন্ধ্যায় রিঙ্কু ও তার বাবার দুটি ট্রলার ইলিশ শিকারে সাগরে যায়। রোববার গভীর রাতে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরে। রিঙ্কু ও তার বাবা জলিল ফকির উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগর মাছ শিকার করেছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক আবুল কাসেম রিঙ্কুর আড়তের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, এ মাছ অনেক আগের। তবে তাজা রক্ত মাখা মাছ আড়তে এলো কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি নীরব থাকেন। তিনি আরও বলেন, রাতেই আড়ত থেকে মাছ সরিয়ে ফেলে হয়েছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক আবুল কাসেম রিঙ্কু বলেন, আমার বাবার ইলিশ মাছের আড়ত ব্যবসা আছে। রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন ইলিশ শিকারের সঙ্গে তার জড়িতের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নদীতে টহলে ছিলাম, তবে সোমবার সকালে শুনেছি আমার অফিসের মাঠ সহায়ক আবু কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবার দুটি ট্রলারে সাগর থেকে ইলিশ মাছ শিকার করে ঘাটে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার অফিসের কেউ অনিয়ম করলে আমি এর দায়ভার নেব না। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন