রংপুরের পীরগাছায় একের পর এক চুরি হচ্ছে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার। চোরের দল খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার খুলে এর ভেতরের তামার কয়েল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় গ্রাহকরা। গত এত মাসে ১২টি চুরির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।
জানা গেছে, গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ১২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ওকড়াবাড়ী মোড়ে মেসার্স মিতা ব্রিকস ইটভাটার ৩টি, পার্শ্ববর্তী মনুরছড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সেচের কাজে ব্যবহৃত ২টি, সদর ইউনিয়নের কতমতলীতে মেসার্স এসএ ব্রিকস ইটভাটার ৩টি, কালীগঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক বাড়ির ১টি এবং সর্বশেষ গত বুধবার রাতে মেসার্স জুঁই ব্রিকস ইটভাটা থেকে ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। প্রতিটি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৯০ হাজার টাকা হিসেবে চুরি হওয়া সরঞ্জামের মোট আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
মেসার্স জুঁই ব্রিকস ইটভাটার নৈশ প্রহরী আইদুল ইসলাম জানান, রাত ৩টার দিকে ১০-১২ জন মুখোশধারী মোটরসাইকেলে এসে তাকে ও রাশেদ নামে এক যুবককে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ভাটার চিমনির নিচে ফেলে রাখে। এরপর তারা খুঁটি থেকে ৩টি ট্রান্সফরমার খুলে তামার কয়েল বের করে নিয়ে চলে যায়।
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান মিতা ইটভাটার প্রহরী হোসেন আলী। তিনি বলেন, ‘৫-৬ জন মুখোশধারী এসে আমাকে বেঁধে ঘরে ফেলে রাখে। সকালে স্থানীয়দের সহায়তায় ছাড়া পাই। তারা কয়েল নিয়ে বাকি অংশ ফেলে চলে যায়।’
মেসার্স জুঁই ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, সব চুরির ধরন একই। যারা চুরি করছে, তারা বিদ্যুতের কাজে অভিজ্ঞ। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ সাধারণ কেউ করতে পারবে না।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রনজু জানান, সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরও চুরি হচ্ছে। এমনকি ক্যামেরার সরঞ্জামও খুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আমরা এরই মধ্যে মামলা করেছি। প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ চাই।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর পীরগাছা জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের কাজে নিয়োজিত কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরাই এসব চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। কেননা সারাদেশে বিদ্যুতের যত কাজ হয় প্রায় সবখানেই পীরগাছার শ্রমিকরা কাজ করে। এরাই এলাকায় এসে এমন অপকর্ম করে থাকতে পারে। তামার কয়েলের উচ্চমূল্যের কারণে তারা শুধু কয়েল নিয়ে যাচ্ছে। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারের মধ্যে ৯টি গ্রাহকের কেনা, আর বাকি ৩টি বিদ্যুৎ অফিসের। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোমেল বড়ুয়া বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন