জামালপুরের বকশীগঞ্জে এলজিইডির অর্থায়নে একটি সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কাজে নিম্নমানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহারের অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসী।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে কাজে অনিয়ম পান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ জহুরুল হোসেন। পরে তিনি সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেন।
তবে দুই নম্বর ইট ও খোয়া সরিয়ে ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দরপত্র অনুযায়ী কাজ না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
জানা যায়, বকশীগঞ্জ পুরোনো বাসস্ট্যান্ড বটতলা মোড় থেকে মধ্য বাজার হয়ে মেরুরচর ইউনিয়নের জব্বারগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিশেষ করে বাসস্ট্যন্ড থেকে পুরোনো গরুহাটি পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। একেবারে চলাচলের অনুপযোগী।
জরাজীর্ণ চার হাজার ৯শ মিটার সড়কটি মেরামতে দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মেসার্স সৈকত এন্টারপ্রাইজ কাজটি পান। শিডিউল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর কাজ শুরু করে ২০২৫ সালের ২৬ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শুরু হয়নি। দেরিতে কাজ শুরু করলেও নিম্নমানের ইট খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
নিম্নমানের ইট খোয়ার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেন। নেটিজেনদের প্রতিবাদ বাড়তে থাকে। দাবি ওঠে কাজ বন্ধ করার। দাবি উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যান ঠিকাদারের লোকজন। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে কাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। পৌর বিএনপি, ছাত্রদল, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়কসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। বুধবার দুপুরে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন ইউএনও।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী পায়েল টেলিকমের মালিক মারুফ হাসান বলেন, একেবারে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। ইটগুলো দুই নম্বর এবং মাটি মিশ্রিত বালু। এ রাস্তা অল্পদিনেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহম্মেদ সুমন বলেন, সরকারি দরপত্র অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে না। রাস্তার কাজে দুই নম্বর ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারণে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। অনিয়ম করে কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
পৌর বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী ভাটি সাইফুল বলেন, রাস্তাটি অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ। রাস্তা নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম করছেন। দুই নম্বর ইট দিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে তা বেশিদিন টিকবে না। শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের দায়িত্বে থাকা ফয়জুর রহমান জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বন্ধ রয়েছে। এলজিইডি অফিস যেভাবে নির্দেশনা দেবে সে ভাবেই কাজ করা হবে। পরবর্তীতে কজের মানের অবশ্যই উন্নতি হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সামছুল হক বলেন, কাজের মান নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও বিব্রত। নির্মাণকাজের মান উন্নয়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার বলা হলেও নির্দেশনা মানছেন না। তারা প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে কাজ করেন। পরে তারা যদি শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করেন তাহলে বিল বন্ধ করে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ জহুরুল হোসেন জানান, কোনো মাস্তানি চলবে না, কাজ হবে নিয়ম মাফিক। নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে শিডিউল মাফিক কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। নির্দেশনা না মানলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন