

নরসিংদীতে ব্যবসায়ী প্রতিহিংসায় খাদিজা আক্তার (৪২) নামে এক মহিলা ব্যবসায়ীর উপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় খাদিজাসহ চারজন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, নরসিংদীর বড়বাজারের কালীবাজারে তানহা ফ্যাশনের মালিক সোহাগ হোসেন বাবু সরকার ও হিজাব হ্যাভেনের মালিক খাদিজা আক্তারের পাশাপাশি দোকান রয়েছে। এই দুই দোকানের মধ্যে হিজাব হ্যাভেনে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ক্রেতার ভিড় থাকে এবং বেচাকেনাও ভালো হয়। এতে বাবু সরকার দীর্ঘ দিন ধরেই উসকানিমূলক কথা বলে খাদিজার সঙ্গে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে।
এরই জেরে গত ১৯ অক্টোবর দুপুরে খাদিজার দোকানের এক কর্মচারীর হাসিকে কেন্দ্র করে বাবু সরকার লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় খাদিজা, তার ছেলে খায়রুল আলম, দোকান কর্মচারী রাতুল ও হৃদয় আহত হন।
এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে অন্য তথ্য। এ ভিডিওকে কয়েকটি পেজে ‘বিএনপি নেতার হামলায় জামায়াতের মহিলা কর্মী আহত’ বলে প্রচার করছে।
ছড়ানো হচ্ছে ‘নরসিংদীতে বিএনপির এক নেতার দোকানে কিছু বোনেরা বোরকা কিনতে গিয়েছিলেন। ওই নেতা বোরকার দাম বলেছেন ৩ হাজার ২০০ টাকা। কাস্টমার মহিলারা দাম বলেছিলেন ১ হাজার ৩০০ টাকা। এতে ওই নেতা রেগে গিয়ে বলেন, ওরা জামায়াতে ইসলামীর মহিলা কর্মী, বলে তাদের ওপর হামলা শুরু করে দেন। এটা হচ্ছে ক্ষমতা পাবার আগেই ট্রেলার দেখাচ্ছে তারা।’
তবে ঘটনাটির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।
খাদিজা আক্তার বলেন, ঘটনার সময় আমার দোকানে ৭/৮ জন কাস্টমার ছিল। তাই আমার দুটা দোকান অন্য দোকান থেকে আমার সেলসম্যানকে ডেকে আনি। ছোট গলির মধ্যে দোকান তো, গলিতে বাচ্চারা খেলছিল। আমার সেলসম্যান হাসি মুখে বলছে, বাচ্চারা একটু সরে খেলো। এটা শুনে বাবু তেড়ে আসে আর বলে তুই হাসলি কেন। আমাকে আর আমার সেলসম্যানকে গালাগাল করতে করতে একটি কাঠের লাঠি হাতে নিয়ে দৌড়ে এসে আমাদের মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র নেই। আমার দোকানে কাস্টমার বেশি থাকে সবসময়, যেটা আমার পাশের দোকানদার বাবু সহ্য করতে পারে না। আর সে কারণেই আমার ও আমার ছেলে এবং দোকান কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এর আগে বহুবার মার্কেট মালিকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে যে, আমাকে যাতে এখান থেকে উঠানো হয়।
অভিযুক্ত তানহা ফ্যাশনের মালিক সোহাগ হোসেন বাবু সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। তবে তার ছোট ভাই কাউছার সরকার বলেন, ঘটনার সময় আমি দোকানে ছিলাম না। আমি শুনেছি, পাশের দোকানের কর্মচারী আমার মাকে নিয়ে গালি দেয়। এতে আমার ভাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তাদের মারতে যায়। তবে তারাও আমার ভাইকে মারধর করেছে।
নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে ব্যাবসায়িক প্রতিহিংসায় বাবু সরকার এ হামলা চালিয়েছে। ঘটনার পর আমার কাছে দুই পক্ষই এসেছিল, আমি তাদের পিটিশন দিতে বলছি। বাজার কমিটি এ ব্যাপারটির সুষ্ঠু সমাধানে দ্রুতই বসবে। উভয় পক্ষের সাথেই কথা বলেছি, তারা সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মঞ্জুর এলাহী ও নরসিংদী জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আমজাদ হোসাইন জানান, দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে হামলার ঘটনায় কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। অনলাইনে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন