

নরসিংদীর রায়পুরায় গত ১০ দিনে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নিলক্ষার দড়িগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রবাসফেরত যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন।
নিহত যুবকের নাম- মামুন মিয়া (২৫)। তিনি দড়িগাঁও গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে ও একজন কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৫ দিন পূর্বে কুয়েত থেকে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফেরেন।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) একই উপজেলার বাঁশগাড়ীতে প্রাণতোষ সরকার (৪২) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরিবার জানায়, মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন প্রাণতোষ সরকার। এ সময় প্রাণতোষের সঙ্গে কথা বলার জন্য দুজন লোক তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা বাঁশগাড়ী দিঘলিয়াকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রাণতোষকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
এর আগে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকার সড়কের পাশ থেকে শাহাদাৎ হোসেন (১৪) নামে এক কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা, দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাহাদাৎকে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকায় সড়কের পাশে ফেলে রেখে গেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই নিলক্ষা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শহিদ মিয়া গ্রুপ ও ফেলু মিয়া গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। শহিদ মিয়া গ্রুপে নেতৃত্ব দেন নাজিম উদ্দিন মেম্বার ও ফেলু মিয়া গ্রুপে নেতৃত্ব দেন জবা মিয়া। আর নিহত মামুন ছিলেন নাজিম উদ্দিন গ্রুপের এবং অপর গ্রুপ জবা মিয়ার ভাতিজির জামাতা হন। সেই সুবাদে মামুন দুই গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা করতে তার শ্বশুরবাড়ি গেলে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে তার বাবা আউয়াল মিয়াও উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামুনকে গুলি করে।
এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে মামুনের বাবা আউয়ালসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মামুনের বাবা আউয়াল মিয়া (৫৫) এবং পরশ মিয়া নামে আরও দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহত মামুনের বোন সোমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ১৫ দিন পূর্বে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে কুয়েত থেকে দেশে ফেরেন আমার ভাই মামুন। আমাদের নিলক্ষা দড়িগাঁও ও দড়িগাঁও ফেলুর বাড়ির মধ্যে আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। আর সেই বিরোধ মীমাংসা জন্যই তার শ্বশুরবাড়ি দড়িগাঁও ছক্কার বাড়িতে যান। সেখানে আমার ভাইয়ের আপন শ্যালক এনামুল, সোহাগ ও শ্বশুর ইসব এবং চাচা শ্বশুর জবা মিয়া আমার ভাই ও বাবাকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে। এতে আমার ভাই নিহত হয় এবং আমার বাবা ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানা কবির বলেন, নিলক্ষার সংঘর্ষের ঘটনায় বাবা ও ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাই। বাবার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত মামুনের পেটে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি, আঘাতের ধরণ দেখে গুলি মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মন্তব্য করুন