

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় যশোর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনটি সম্পূর্ণ ফাঁকা রয়ে গেছে।
এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দাবি করছেন, এই আসনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচনের জন্য বিএনপির লোকই যোগ্য। বিএনপির নেতাকর্মীরাই আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে অবদান রেখে এসেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেন। এতে যশোর-১ (শার্শা) আসনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নী, যশোর-৩ (সদর) আসনে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির তরুণ নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতা টিএস আইয়ুব এবং যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রওনক জাহান শ্রাবণ মনোনয়ন পেয়েছেন। যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন কয়েকজন। তার মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, সাবেক ছাত্রনেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. মুতাছিম বিল্লাহ।
এর মধ্যে অ্যাড. শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বিগত সময়ে একাধিকবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ৩ মেয়াদে, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। দলীয় কর্মসূচি পালনে তিনি সর্বদা সক্রিয় ছিলেন। জেল-জুলুম-হুলিয়া ছিল তার নিত্যসঙ্গী। শত মামলা নিয়েও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তিনি।
ইকবাল হোসেন বলেন, আমি এর আগে নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। এবারের নির্বাচনেও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব। শত প্রতিকূল পরিবেশেও সব সময় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। মনিরামপুরে এখনো দল থেকে কারোর নাম ঘোষণা করা হয়নি। আমাদের প্রাণের দাবি, এ আসন থেকে বিএনপির কাউকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হোক।
আসাদুজ্জামান মিন্টু জানান, হাইকমান্ড বলেছে কাজ করতে, আমি কাজ করছি। ধানের শীষের জন্য কাজ করছি। মনোনয়নের ক্ষেত্রেও আমি আশাবাদী। তবে ধানের শীষ যিনিই পাবেন, তাকেই বিজয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।
সাবেক ছাত্রনেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি বলেন, ২০১৪ সালে ঢাকা থেকে গুম হয়ে বহু চেষ্টায় প্রাণে বেঁচে ফিরি। সংগঠনের কর্মসূচি পালন শেষে খুলনা থেকে ফেরার সময় ফ্যাসিস্টদের হামলার শিকার হয়েছিলাম। মনিরামপুরে যত আন্দোলন সংগ্রাম সব বিএনপির নেতাকর্মীরাই করেছে। আমি চাই এ আসনে বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
মুতাছিম বিল্লাহ বলেন, দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন অনেক হামলা মামলার শিকার হয়েছি। একাধিকবার কারাবরণও করেছি। আমার আসনে আন্দোলন, সংগ্রাম, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা সব থেকে বেশি। সুতরাং আমাদের সবার প্রাণের দাবি, দলের হাইকমান্ড যোগ্যতা বিবেচনায় বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দিক। আমরা সবাই ধানের শীষের জন্য কাজ করতে চাই।
মনিরামপুর উপজেলায় বিএনপির সহসভাপতি অ্যাড. মকবুল ইসলাম বলেন, আমরা ধানের শীষ প্রতীকের জন্য লড়াই- সংগ্রাম করে আসছি। দিনের পর দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে দল করার জন্য। পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। যত হামলা-মামলা ও আন্দোলন সংগ্রাম আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরাই করেছি। সুতরাং আমাদের এই আসন থেকে আমরা সবাই চাই বিএনপির কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক।
জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নির্বাচনি আসন ৮৯, যশোর-৫ (মনিরামপুর)। উপজেলা নির্বাচন অফিসার কামরুজ্জামান জানান, এ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন। নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৪০ জন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ আসনটিতে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ১৯৭৯ বিএনপির প্রার্থী আফসার আহমদ সিদ্দিকী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জয়ী হন আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ২০০১ সালে জয়ী হন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, ২০০৮ সালে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ নির্বাচনে বিজয়ী হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী।
মন্তব্য করুন