

ময়মনসিংহ নগরীতে এক নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর ও চুল কেটে মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার নারী থানায় মামলার পর বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গত বুধবার (১২ নভেম্বর) নিজের স্কুলছাত্র ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় মামলার জেরে হামলার শিকার হন মোছা. রুপা নামে যাত্রাপালার ওই নৃত্যশিল্পী।
তাকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহ আলম (৪০) নগরীর চরকালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে জুবিলী ঘাট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার যাত্রাশিল্পী রুপা ময়মনসিংহ নগরের বড় কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তবে তারা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
জানা গেছে, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন রুপা। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রুপা আদালতে মামলা করেন।
এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রুপার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় রুপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
রুপার করা ভাঙচুর মামলার তদন্ত করতে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তা থেকে রুপাকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে নির্যাতন করে। এ সময় তার সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রুপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাসুদ জামেলী কালবেলাকে বলেন, ওই নারীকে বেঁধে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে, মুখে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।
যাত্রাশিল্পী রুপা কালবেলাকে বলেন, আমি বাসার কাজ শুরু করার পর মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা চায়। আমি টাকা না দেওয়ায় আমার বাড়িঘরে হামলা করে। পরে আমি শাহ আলমকে এক লাখ টাকা দিতে বাধ্য হই। তারপরও আমার বাড়িঘরে হামলা করে। ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে আমি আদালতে মামলা করি, সেই মামলার আসামি শাহ আলম এক মাস জেল খাটার পর বাড়িতে আসে।
রুপা আরও বলেন, জেল খেটে বাড়িতে আসার পর লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেখার পর চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কামড় দেয়। শরীরে আঘাত করা হয়। আমি বিচার চাই। আমি সঠিক বিচার না পেলে আত্মহত্যা করব।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন