মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চলতি মৌসুমে পাটের ফলন ভালো হলেও তেমন দামে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছে কৃষক। উৎপাদনের খরচের তুলনায় আশানুরূপ পাটের দাম না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন উপজেলার কয়েক হাজারপাট চাষিরা।
দাম কমের কারণ হিসেবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় অনেক ব্যবসায়ীই এ বছর পাট কিনছেন না। এতে করে বাজারে পাটের আমদানি থাকলেও দাম অনেকটাই কমে। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৮০০ থেকে সর্বাচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পাট বিক্রি করলে চাষিদের কোনোরকমে উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার ওপর নারী শ্রমিক পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছে। আবার কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে ডোবায় পানিতে পুরুষদের আঁশ ছাড়াতে দেখা যায়।
তবে একাধিক কৃষকরা জানান, পাটের বীজ রোপণের পর থেকে দেখা দেয় খরা। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিও না হওয়ায় সেচের মাধ্যমেও পাট ক্ষেতে পানি দিতে হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে আশানুরূপ পানি না হওয়ায় পাট জাগেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এতে করে জমি থেকে দূরদূরান্তে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদনের খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এবং তুলনামূলক পাটের দাম কম হওয়ায় মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।
উপজেলার চালা ইউনিয়নের আগ্রাইল দড়িকান্দি গ্রামের পাট চাষি নান্নু জানান, আমি ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পুরুষ শ্রমিক নিলে এক হাজার টাকা রোজ দিতে হয়। তাই পাটখড়ির বিনিময়ে নারী শ্রমিক দিয়ে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করাচ্ছি। এরপরেও পাটের যে দাম আমাদের লোকসান হবে। কারণ দামের তুলনায় খরচ অনেক বেশি পড়ছে। আমি ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দরে পাট বিক্রি করেছি। এ বছর আমার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।
একই গ্রামের সুলতান খাঁ বলেন, ‘আমি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ২ বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ পাট হবে। সার, তেল আর শ্রমিক খরচ যে হারে লেগেছে তাতে খরচের টাকা কোনো রকম উঠলেও লাভের মুখ দেখতে পারব বলে মনে হয় না। কারণ বাজার তো ভালো না। ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে পাটের বাজার চলছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে হরিরামপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের ৬৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৫৭৭ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬৩৫ বেল (৫ মণে এক বেল)।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, আসলে এই মুহূর্তে খরচের তুলনায় দাম একটু কম। তবে সবে তো পাট উঠছে। এখন একটু দাম কম। তবে দাম আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। তখন হয়তো কৃষক দাম ভালো পেতে পারে।
মন্তব্য করুন