

নীলফামারীর ডোমার ভিত্তি আলুবীজ উৎপাদন খামার আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ইতিহাস সমৃদ্ধ এ খামারটি ১৯৫৭-৫৮ সালে হুকুম দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে রূপ নেয় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলুবীজ উৎপাদন অবকাঠামোতে।
১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে খামারের কার্যক্রমে গুণগত পরিবর্তন আসে। বর্তমানে মূল খামারটির আয়তন ৫১৪.৪৮ একর এবং এর আওতায় দেবীগঞ্জে রয়েছে আরও ৮৬.২৯ একর জমির আলুবীজ উৎপাদন খামার। ডোমার খামারের প্রধান শক্তি এর ৭টি অত্যাধুনিক টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি। এ ল্যাবগুলোতে দক্ষ জনবল ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১৭-১৮টি জাতের মোট ২৫ লাখ ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন করা হয়। এই প্লান্টলেট থেকেই ধাপে ধাপে উৎপাদিত হয় মিনিটিউবার, প্রাকভিত্তি, ভিত্তি এবং পরবর্তীতে প্রত্যায়িত আলুবীজ।
খামারের নিজস্ব হিমাগার এবং পরবর্তী সময় দেশব্যাপী বিএডিসির ৩২টি হিমাগার জোনে সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই বীজ প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার মেট্রিক টন পরিমাণে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে বিএডিসি ১৮টি উন্নত জাতের ২৫ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো—বিএডিসি আলু-১ (সানসাইন), আলু-৩ (সানতানা), আলু-৬ (কুমবিকা), আলু-৭ (কুইন অ্যানি), আলু-৮ (লেবেলা), বারিআলু-৭ (ডায়মন্ট), বারিআলু-৮ (কার্ডিনাল), বারিআলু-১৩ (গ্রানোলা), বারিআলু-২৫ (এস্টারিক্স), বারিআলু-২৯ (কারেজ), বারিআলু-২৮ (লেডিরোসেটা), বারিআলু-৫৪ (মিউজিকা), বারিআলু-৮৫ (৭ ফোর ৭), বারিআলু-৯০ (এলোয়েট), সাগিত, বারিআলু-৬২ ও বারিআলু-৮৬।
ডোমার খামারের উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ল্যাবসমূহের আধুনিকীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন খামারের উপপরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা। তার নেতৃত্বে—ল্যাবগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, প্লান্টলেট, মিনিটিউবার ও ভিত্তি বীজ উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা আগের চেয়ে অধিক সফলতা পেয়েছে, খামারের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বেড়েছে, বীজ উৎপাদনের ধাপভিত্তিক কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন হচ্ছে, মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম তদারকি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
বীজআলু উৎপাদনকে আধুনিক, পরিকল্পিত ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে তিনি নিয়মিত কাজ করছেন। খামারের কর্মকর্তারা জানান, তার নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
খামারের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উপপরিচালক মো. আবু তালেব মিঞা বলেন, ডোমার ভিত্তি আলুবীজ উৎপাদন খামার দেশের আলুবীজ উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের ৭টি টিস্যুকালচার ল্যাবে যে মানের ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন হয়, তা থেকেই প্রতি বছর লাখ লাখ কৃষক উপকৃত হন। আমরা লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করছি এবং বীজের গুণগত মান ধরে রাখতে সবসময় কঠোর নজরদারি করছি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় আলুবীজের যে ভূমিকা, তার একটি বড় অংশই এই খামার থেকে আসে—এটাই আমাদের গর্ব।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমেও আমরা ২৫ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছি। মাঠপর্যায়ে রোপণ ও হার্ডেনিং কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। আমরা চাই ডোমারের আলুবীজ দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও বেশি পরিমাণে পৌঁছাক এবং কৃষকরা উচ্চফলনশীল, রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করে সেরা ফলন পান।
প্রসঙ্গত, উচ্চমানের ভাইরাসমুক্ত আলুবীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে ডোমার খামার এখন দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ জনবলের কারণে এই খামার বাংলাদেশের আলুচাষে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
মন্তব্য করুন