

খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী বলেছে, হিন্দু হয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়ার কারণে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই, কোনো কথাও হয় না।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি জামায়াতে এমপি প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীর কিছু ছবি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে মদপানরত অবস্থায় ছবি নিয়ে কড়া সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন তিনি। এছাড়াও খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে ছবি নিয়েও নানা কথা উঠেছে।
ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ওয়ার্ল্ড হিন্দু নেতা শিপন কুমার বসুর মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সে একজন ব্ল্যাকমেইলার, আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে— আমি হিন্দু হয়ে কেন জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দু ধর্মকে বিতর্কিত করছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তা নয়, ব্যবসার খাতিরে তার সঙ্গে আমার চলাফেরা করতে হয়েছে। তিনি মন্ত্রী আর আমি একজন ব্যবসায়ী তাই ফুল দিতেই পারি। তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামী করি বলে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় হিন্দুদের মনে একটা শান্তি ফিরে এসেছে। এতে হিন্দুরা মনে করছে জামায়াতে ইসলামী অসম্প্রদায়িক একটি দল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিপনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল। তার ওখানে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর থেকে সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। তার বাসায় যাওয়ার পরে সে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করবে বুঝতে পারিনি।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ১ ডিসেম্বর খুলনায় ৮ দলীয় বিভাগীয় সম্মেলনের শেষে আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। আর এ ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয় জামায়াতে ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যা প্রপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে এটা গভীর ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়ার চুকনগরে। তার বাবা-দাদার জন্মও সেখানে। লেখাপড়া করেছেন চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। ২০০৩ সালে জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাত ধরেই দলটিতে যোগ দেন তিনি। গত বছর তাকে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি করা হয়। গত ৩১ অক্টোবর জামায়াতের হিন্দু সমাবেশে তার নেতৃত্বে বিপুল জমায়েত হয়েছিল। এরপরই তাকে প্রার্থী করার গুঞ্জন ওঠে। পরবর্তীতে হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে তিনি বটিয়াঘাটা উপজেলায় প্রচার শুরু করেন।
মন্তব্য করুন