রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৩১ ঘণ্টা ধরে শিশু সাজিদের অপেক্ষায় মা

শিশু সাজিদের উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিস। ইনসেটে সাজিদের মা। ছবি : কালবেলা
শিশু সাজিদের উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিস। ইনসেটে সাজিদের মা। ছবি : কালবেলা

তীব্র শীত। কুয়াশায় ঢেকে থাকা রাত। আর সেই রাতেই রাজশাহীর তানোরের কয়েলের হাট মধ্যপাড়ায় এলাকায় শিশু সাজিদকে এক নজর দেখতে রাতভর মা রুনা বেগমের দীর্ঘ অপেক্ষা। বুধবার দুপুর পেরিয়ে বিকেল। তারপর সন্ধ্যা। পরে রাত পেরিয়ে ভোর।

আবার ভোর পেরিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ছোট্ট সাজিদকে কাছে পাননি মা।

দীর্ঘ এ সময়ে মা রুনা বেগমের আহাজারিতে কোয়েল হাট মধ্যপাড়ার আকাশ-বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে। বুকফাটা আর্তনাদে শুধু বলছিলেন, আমার ছেলের মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রচণ্ড জ্বর ছিল। দাদার সঙ্গে হাটখোলায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু জ্বর থাকায় দাদা নিয়ে যায়নি। এতটুকু বলেই কাঁপতে কাঁপতে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন তিনি। প্রতিবার জ্ঞান ফিরেই আবার তাকাচ্ছিলেন সেই গর্তের দিকে— চোখে একমাত্র প্রশ্ন, ‘আমার ছেলেটাকে কি আমি আবার জড়িয়ে ধরতে পারব?’

ছোট্ট সাজিদের অপেক্ষায় উৎসুক জনতার ভিড় : মাত্র আট সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের চিকন গর্ত দিয়ে শিশু সাজিদ যে কত গভীরে গিয়ে রয়েছে আর কখন সে উদ্ধার হবে এমন আশা-নিরাশার দোলাচলে বুধবার রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সারাদিন ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। শিশু সাজিদকে উদ্ধারে তিনটি এক্সকেভেটর পরিত্যক্ত ডিপ টিউবওয়েলটির পশ্চিম পাশেই রাতভর মাটি খননের কাজ করতে থাকে।

এরপর সারাদিন টান টান উত্তেজনায় অধীর আগ্রহে ছোট্ট শিশুটির জন্য অপেক্ষা করছিল হাজারো মানুষ। ছোট্ট শিশুটিকে কখন, কীভাবে উদ্ধার করা হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিল তানোরের পাচোন্দর ইউনিয়নের শত শত উৎসুক জনতা। ছোট্ট সাজিদের অপেক্ষায় রাতভর তারা নির্ঘুম কাটিয়েছেন।

পাশের গ্রাম থেকে উদ্ধার তৎপরতা দেখতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে থাকবে আর আমরা বাড়িতে ঘুমাবো, এটা হতেই পারে না। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে রাতভর আমরাও শিশুটির জন্য জেগে ছিলাম। যাতে ছোট্ট সাজিদ সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, যে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল সেটি পাশের গ্রামের ওছির আলী নামে এক ব্যক্তি অনুমোদন ছাড়াই নিজ উদ্যোগে খনন করেছিলেন। পরে সেটিতে পানি না ওঠায় পরিত্যক্ত হয়। তবে সেই গর্ত তিনি পূরণ করেননি। আমরা এমন লোকদের বিচার দাবি করছি।

এদিকে দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টায় অন্তত শিশু সাজিদকে উদ্ধারে ৬০ ফুট গভীর পরিখা খনন করা হলেও তার সন্ধান না পাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়; অবহেলার কারণেই পরিত্যক্ত এই অবৈধ গভীর নলকূপের গর্ত ঠিকমতো ভরাট না করা ব্যক্তির ওপরও ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তারা বলছেন, অনুমোদনহীন ব্যক্তি মালিকানার এসব নলকূপ যত্রতত্র স্থাপন করার কারণেই আজ শিশু সাজিদকে এভাবে হয়তো চলে যেতে হচ্ছে। আর মায়ের চোখের সামনে নিজের নাড়িছেঁড়া ধন নিমিষেই এভাবে পাতালে চলে যাওয়ার বিষয়টিও শিশু সাজিদের মা রুনা বেগমসহ এলাকাবাসী কেউই যেন মেনে নিতে পারছেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিশু সাজিদকে যেভাবে পেলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

শিশু সাজিদ জীবিত উদ্ধার হলো যেভাবে

‘অপমানবোধ করছেন’, সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন : রয়টার্স

শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার

নতুন দায়িত্ব পেলেন আসিফ নজরুল

ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিল মেক্সিকো, বড় ক্ষতির মুখে মোদি

নতুন করে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন রিজওয়ানা হাসান

বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমতি মেলেনি

চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ

ভীতিমুক্ত ভোটার প্রভাবমুক্ত প্রশাসন এখনো দৃশ্যমান নয় : ড. দেবপ্রিয়

১০

৩১ ঘণ্টা ধরে শিশু সাজিদের অপেক্ষায় মা

১১

তৃণমূল এনসিপি গঠনের ঘোষণা

১২

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যেসব কারণে

১৩

৩ উপদেষ্টার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন, কে কোন মন্ত্রণালয় পেলেন?

১৪

আ.লীগের ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা

১৫

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বেকারদের কর্মসংস্থান করা হবে : তৃপ্তি

১৬

গণহারে পদত্যাগের ঘোষণা ইসরায়েলি সেনাদের

১৭

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে

১৮

৩০ ঘণ্টায়ও দেখা মেলেনি সাজিদের, না পাওয়া পর্যন্ত চলবে অভিযান

১৯

বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই : কৃষ্ণ নন্দী

২০
X